পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন প্রধান শিক্ষক বাবার নিথর দেহ

মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে দেখেন খাটিয়ায় নিজ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবার নিথর দেহ পড়ে আছে। আজ বৃহস্পতিবার ( ১০ মার্চ) সকালে এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর বাউফলে ভরিপাশা গ্রামে।
মেয়ের এসএসসির প্রথম পরীক্ষা। তাই মা-বাবা দুজনে মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। পথে বুকে প্রচণ্ড ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বাবা। মেয়ে একাই চলে যায় পরীক্ষা কেন্দ্রে। স্বামীকে নিয়ে স্ত্রী যান হাসপাতালে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। তবে মেয়েকে জানানো হয়নি বাবা মারা গেছেন।
ভরিপাশা গ্রামের বাসিন্দা ও কালিশুরী এস এ ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর বিদ্যালয় থেকেই এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে মেয়ে তাসফিয়া আক্তার।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকেই বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন মো. মাহবুবুর রহমান। তার পরও মেয়েকে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে রওনা হন। কথা ছিল মেয়েকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন। তবে সে সুযোগ আর হয়নি। পথে গাজীমাঝি এলাকায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয়রা তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে পরীক্ষায় মন বসছিল না তাসফিয়ার। বার বার পরীক্ষা কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষিকদের কাছে জানতে চাইছিলেন বাবা কেমন আছেন। তাঁরা বলছিলেন, ‘তোমার বাবা সুস্থ আছেন। তুমি পরীক্ষা দাও।’ পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরে দেখে বাবার মরহে। বাড়িজুড়ে মানুষের ভিড়, কান্নার রোল।
তাসফিয়া বলে, ‘সকালে বাবার সঙ্গে ভাত খেয়েছি। তাঁর বুকে তখন থেকেই ব্যথা করছিল। আমি ও আম্মু বারবার বলছি ডাক্তারের কাছে যাও। আব্বু বলছিল, আমাকে পরীক্ষাকেন্দ্র দিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবেন। পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি পরীক্ষাকেন্দ্রে চলে যাই। আব্বুকে নেওয়া হওয়া হাসপাতালে। পরীক্ষার হলে স্যারেরা বলছিলেন আব্বু সুস্থ আছেন। বাড়ি এসে দেখি ...।’ কান্নায় ভেঙে পড়ে আর কথা বলতে পারেনি সে।
কালিশুরী এস এ ইনস্টিটিউটের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. ইউসুফ বলেন, তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। তার অকালে চলে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।