‘স্বাধীন হলেই চলবে না, মুক্তি পেতে হবে’
নববর্ষের নানা আয়োজন ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। রাজধানীর রমনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলার সামনে বৈশাখের উৎসবে দল দলে যোগ দিচ্ছেন নানা বর্ণের-গোত্রের মানুষ। ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ শুরু হতে তখনও ঘণ্টাখানেক বাকি। এমন সময় বাংলা একাডেমির অদূরে দেখা যায় গুটি গুটি পায়ে হেঁটে আসছেন বয়সের ভারে নতজানু এক বৃদ্ধ। দুটি লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটছেন তিনি।
কাছে যেতেই কথা বলতে চাইলেন। জানালেন, তিনি বাংলা একাডেমির এক সেমিনারে যোগ দেবেন। বললেন, আমার নাম ড. ফ র আল-সিদ্দিক। আমি বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য।
কিভাবে এসেছেন— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মিরপুর থেকে এসেছি। শাহবাগ দিয়ে যখন আমি ঢুকি তখন পুলিশ মিষ্টি হেসে বলে, এদিক দিয়ে গেলে অসুবিধা হবে, ওদিক দিয়ে যান। আরেক পথে গেলে বলে, এদিকে দিয়ে যান। এমন করে দুই-তিন ঘণ্টা ধরে আমাকে হাঁটাচ্ছে। তিন-চারবার রিকশা বদলাতে দুইশ টাকা ভাড়াও গেছে। এত মিষ্টি করে যে ভুল পথে চালায়, আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমি যদি সোজা চলে আসতে পারতাম তাহলে শাহবাগ থেকে ১৫-২০ মিনিট লাগতো। আর এখন দুই-তিন ঘণ্টা ধরে হাঁটিতেছি আর হাঁটতেছি। রিকশা বদলাচ্ছি।
পরিচয় জানার পরও আপনাকে শাহবাগ দিয়ে আসতে দেওয়া হলো না— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, না, মিষ্টি হেসে আমাকে ভুল পথে চালিয়েছে। আমি দুনিয়া ঘুরে আসছি।
‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ থেকে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। কি বলবেন? এর উত্তরে ড. ফ র আল-সিদ্দিক বলেন, ভালোই হয়েছে। আমরা মনে হয়, এত বদলা-বদলির দরকার নেই। একটা নাম হলেই হলো। দুটোই ভালো নাম। এক পার্টি আরেক পার্টিকে ঘৃণা করবে— এটা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে হবে। যার কথা সে বলবে, কথা বলার স্বাধীনতা দিতে হবে। সবাই শয়তান, আর আমরা ভালো— এই যে ভাবটা আমাদের— এটা থেকি মুক্তি পেতে হবে। না হলে আমরা কোনোদিনই সত্যিকারের মুক্তি পাব না।
৯৪ বছর বয়সে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে-নাতি-নাতনি সবাইকে নিয়ে ভালো আছেন বলেও জানান তিনি।
বর্তমান বাংলাদেশ নিয়ে কিছু বলবেন? ড. ফ র আল-সিদ্দিক বলেন, আমরা ভুল পথে চলতেছি। এত লড়াই করেও জাতি মুক্তি পেল না। এই জাতিকে চিন্তা করতে হবে, আমি সেই চিন্তায় সাহায্য করতে পারি। কিন্তু আমাকেই এভাবে বাঁধা দিচ্ছে! আমাকে যেমন আজকে বাধা দিচ্ছে, সব জায়গায় বাধা দিচ্ছে।
সবার উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন? ৯৪ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ বলেন, আমার একটাই আহ্বান থাকবে, সৎ পথে চলতে হবে। শুধু স্বাধীন হলেই চলবে না, মুক্তি পেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ করে লাভ কি, যদি মুক্তি নাই পেলাম।