প্রাইমারির বন্ধুদের পেয়ে প্রবীণরা হয়ে ওঠেন শিশুদের মতো উচ্ছ্বল!

কারও বয়স ৭০ বছর, কারও ৭৫। কারও মুখের অধিকাংশ দাঁত নেই, মাথায় চুল নেই, কারও চুল-দাড়ি সাদা হয়ে গেছে, চামড়ায় পড়েছে বয়সের ভাঁজ। কেউ পেশায় বড় ব্যবসায়ী, কেউ ব্যাংকার বা চিকিৎসক। তারা নানা-নানি হয়েছেন অনেক আগেই। তবে বয়স ও পেশা তাদের বন্ধুত্ব আর আনন্দ উৎসবে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। একসঙ্গে তারা নেচেছেন, গান গেয়েছেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো দিনের বন্ধুদের কাছে পেয়ে তারা হয়ে উঠেছেন ৮-১০ বছরের শিশুদের মতো উচ্ছ্বল। একজন অন্যজনের সঙ্গে তুই-তোকারি করে মজার স্মৃতিচারণ করছেন।
কুমিল্লা মডার্ন প্রাইমারি স্কুল অ্যালামনাইয়ের বৈশাখী উৎসব ও ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এই দৃশ্য চোখে পড়ে। আজ শনিবার (২৬ এপ্রিল) এই উপলক্ষে স্কুল আঙিনায় বসেছিল আনন্দের হাট।
অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষরা লাল উত্তরীয় গলায় আর নারীরা ফুলের টায়রা মাথায় লাগিয়ে ঘুরছেন ও আড্ডা দিচ্ছেন। নিজেদের হারিয়ে যাওয়া দিনের স্মৃতিচারণ করছেন। দই, চিড়া, বাতাসা, কাঁচা আমের জুসসহ নানা আয়োজনের পসরা সাজানো হয়েছে। ছবি তোলার সময় শিশুদের মতো ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন তারা ইচ্ছে করেই! কেউ ঘাসে বসে পড়ছেন।
কুমিল্লা মডার্ন স্কুল অ্যালামনাইয়ের অর্থ সম্পাদক ৭৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এখানে এসে মনে হচ্ছে তিনি ক্লাস থ্রি-ফোরের ছাত্র। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে তার অনেক ভালো লাগছে। তারা পুনর্মিলনীর পাশাপাশি দরিদ্র মেধাবীদের সহযোগিতাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছেন।
কমিটির সহসভাপতি ৬৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী দিলনাশি মোহসেন বলেন, তিনিও এই স্কুলের ছাত্রী ছিলেন এবং তার মেয়েও এই স্কুলের ছাত্রী। এখানে এসে তিনি অতীতে ফিরে গেছেন। তাদের সময়ে স্কুলে একদিন পায়েস ও একদিন খিচুড়ি দিত। তিনি খিচুড়ি পছন্দ করতেন, তাই ডাইনিংয়ে গিয়ে একটু বেশি নিতে চাইতেন!
কমিটির উপদেষ্টা ৬২ ব্যাচের জামিল আহমেদ খন্দকার, ৬৭ ব্যাচের শাহ মোহাম্মদ সেলিম, কুমিল্লা অঞ্চলের সমন্বয়কারী ৬৭ ব্যাচের মোবারক হোসেন সেলিম ও ঢাকা অঞ্চলের সমন্বয়কারী ৭২ ব্যাচের কাজী ফখরুল আলম বলেন, স্কুলটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি দেশের সেরা স্কুলের মধ্যে একটি। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তারা ১০ বছর আগে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন গঠন করেন। এই অনুষ্ঠানে কুমিল্লা জেলা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে বন্ধুরা এসেছেন এবং সবাই আনন্দে সময় কাটিয়েছেন।
কমিটির সভাপতি ৬৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী কাজী মমতাজ হক ও সাধারণ সম্পাদক ৭০ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর কবির আপেল বলেন, এখানে এসে বিভিন্ন ব্যাচের বন্ধুরা স্কুল পালানো ও স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখাসহ নানা স্মৃতিচারণ করেন। তারা সবার সহযোগিতা নিয়ে অনুষ্ঠান করেছেন এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগও গ্রহণ করবেন।