নিয়মের বাইরে প্রশ্নপত্র করে পরীক্ষা নেওয়ায় খেসারত দিলেন ৯৯ শিক্ষার্থী

নিয়মের বাইরে গিয়ে নওগাঁর বদলগাছী মডেল পাইলট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়ায় খেসারত দিলেন ৯৯ পরীক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীরা অকৃতকার্য হওয়ায় পরবর্তী শ্রেণিতে উঠতে পারেনি। ফলে তাদের এক বছর নষ্ট হয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
ছোট যমুনা নদীর কোলঘেঁষে ১৯৪০ সালে বদলগাছী মডেল পাইলট হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি সরকারি হয় ২০১৮ সালে। উপজেলার শ্রেষ্ঠ ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপজেলায় সুনাম অর্জন করে। কিন্তু গত বছর বার্ষিক পরীক্ষায় ৯৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় বর্তমান বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অভিভাবকসহ স্থানীয়রা। নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ৩৭.০৬.০০০০.৪০২.৭১.০৬৬.০২.৩৪ নং স্মারকের মাধ্যমে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানায় যে, সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি মোতাবেক শ্রেণিকক্ষে শিখন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে না বলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক মহল থেকে দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসূমহ বার্ষিক পরীক্ষার পূর্ব পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে যতটুকু অংশ সম্পন্ন করতে পারবে তার ভিক্তিতে নমুনা প্রশ্নপত্রের আলোকে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক শিক্ষা অধিদপ্তরের চিঠিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পুরো সিলেবাস থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেওয়ায় মাশুল দিতে হয়েছে ৯৯ শিক্ষার্থীকে। অকৃতকার্য হওয়ায় শিক্ষার্থীরা পরবর্তী শ্রেণিতে উঠতে পারেনি। ফলে তাদের এক বছর নষ্ট হয়েছে। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে তন্ময়, রাজ, আরাফাত, সান মাহমুদ সহ বেশ কয়েকজন অকৃতকার্য শিক্ষার্থী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, গত বছর জুলাই আন্দোলন চলাকালে অর্ধবার্ষিক ক্লাস স্থগিত হয়। তারপর দেশের অস্থিরতার কারণে পাঠদান ব্যাহত হয়। সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে আমাদের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস আসে। এরপর পাঠদান শুরু হয়। কিন্তু সিলেবাস অনুযায়ী ক্লাস শিক্ষকরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শেষ করতে পারেননি। তারপর শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নির্দেশনা আসে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের মধ্যে থেকে যতটুকু পড়া হবে তার ভিতর থেকে পরীক্ষা নেওয়ার। কিন্তু প্রধান শিক্ষক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা না মেনে পুরো সিলেবাস থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। এরপর ফল প্রকাশ হলে বিদ্যালয়ের ৯৯ জন পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়।
ওই শিক্ষার্থীরা আরও জানান, এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এক মাস আগে অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি। আবার কেউ কেউ অতিষ্ঠ হয়ে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছেন।
এ বিষয়ে বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুলের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এমন একটি নির্দেশনা ছিল। সে অনুযায়ী প্রশ্নপত্র তৈরি করার কথা ছিল। তবে প্রধান শিক্ষক আমাদের কারো সাথে কোন আলোচনা না করে পুরো সিলেবাস থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেন। এতে করে প্রতিষ্ঠানের মান ক্ষুণ্ন হয়েছে। তিনি এককভাবে যা মনে করেন তাই করেন।
এ বিষয়ে অভিভাবকদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল আমাদের উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমাদের স্বপ্ন ছিল এ বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়ে ভর্তি হলে ভালো রেজাল্ট করবে। কিন্তু বাস্তবে এখন দেখছি এখানে ভালো পড়াশোনা হয় না।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন (উকিল) এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত চলমান আছে। তবে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ধরে রাখতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যে ছাত্র-ছাত্রী এক বছর ক্লাস করে একটি অংক করতে পারে না, তাদের ঐ ক্লাসেই থাকা উচিৎ। ভালোভাবে পড়াশোনা করে পরবর্তী ক্লাসে ওঠা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগের সাথে শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা হাতে পেয়েছি। প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে জানাতে পারবো।