লালমাই পাহাড়ে খোঁজ মিলেছে প্রাচীন সভ্যতার

কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের দক্ষিণাংশে আবারও মিলেছে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। সদর দক্ষিণ উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের চারা বাড়ি এলাকায় মাটি খননের সময় স্থানীয় এক জমির মালিক প্রথমে এই পুরাকীর্তির খোঁজ পান। পরবর্তীতে বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে জানানো হলে, তারা ‘বালাগাজীর মুড়া’ নামে পরিচিত স্থানে খনন কার্যক্রম শুরু করে।
বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উদ্যোগে পরিচালিত এই খনন কার্যক্রমে প্রাথমিকভাবে ৬ ফুট চওড়া একটি প্রাচীন দেওয়ালের অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছে। খননের সময় একাধিক স্তরে মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ পাওয়া গেছে, যা প্রাচীন স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা, এই স্থানটি খ্রিষ্টীয় ৭ম-৮ম শতাব্দীর সময়কালের হতে পারে এবং এটি হয়তো কুমিল্লা অঞ্চলের প্রাচীন পট্টিকেরা জনপদের অংশ।
কুমিল্লা ময়নামতি জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান এবং খনন কার্য পরিচালনাকারী টিমের সদস্য মো. শাহীন আলম বলেন, এটি হয়তো কোনো বৃহৎ স্থাপনার কর্নার অংশ। এখানে ছয় ফুট চওড়া দেওয়াল এবং মৃৎপাত্রের টুকরো পাওয়া গেছে, যা প্রাচীন বিহার বা মন্দির স্থাপনার অংশ হতে পারে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘চারা বাড়ি’ নামকরণের পেছনে রয়েছে মাটির নিচে থাকা প্রচুর মৃৎপাত্রের ভগ্নাংশ। সেখান থেকেই নামকরণ হয়। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক ড. মোছা. নাহিদ সুলতানার তত্ত্বাবধানে খনন কার্যক্রম চলছে।
শাহীন আলম আরও বলেন, ‘প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব বিবেচনায় বালাগাজীর মুড়াকে ১৯৪৫ সালে শিমলা গেজেটে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। চলতি বছরে মহাপরিচালকের নির্দেশনায় আমরা এখানে পুনরায় খনন কাজ শুরু করেছি।’

প্রত্নতত্ত্ববিদরা মনে করছেন, ১০ থেকে ১২ একর এলাকাজুড়ে খনন কাজ বিস্তৃত করা হলে শালবন বিহার, আনন্দ বিহার বা রূপবান মুড়ার মতো আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উন্মোচিত হতে পারে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে।