সারা দেশ ট্রাইব্যুনালের বিচারের অপেক্ষায়, শুনানিতে প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন

১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের শহীদুল্লাহ ফকিরের মামলার শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মামুনুর রশিদকে উদ্দেশ্যে করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার বলেছেন, সারাদেশের মানুষ এ ট্রাইব্যুনালের বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে শুনানি করতে আসলেন, প্রস্তুতি ছাড়াও মামলার নথি ছাড়া কেন আসলেন? নথি নাই, পরে আপনারাও নাই হয়ে যাবেন।
আজ বুধবার (৭ মে) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন আর্ন্তজাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। ট্রাইব্যুনালের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শুনানিতে প্রথম মামলাটি ছিল পুলিশের সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হকসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাদের। এটি শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম।
পরে কার্যতালিকায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের শহীদুল্লাহ ফকিরের ২০২৩ সালে করা মামলার শুনানি শুরু হয়।
শুনানিতে প্রসিকিউটর মামুনুর রশীদ বলেন, মাই লর্ড, এ মামলা আজকে সাক্ষীর জন্য রয়েছে। আমরা সময় প্রার্থনা করছি।
এ সময় আদালত জানতে চান, মামলার সাক্ষ্য শুরু হচ্ছে না কেন? একটা দুটি করে সাক্ষ্য শুরু করেন।
এ সময় প্রসিকিউটর মামুনুর রশীদ বলেন, মাই লর্ড, মামলার নথিপত্র আমাদের কাছে নাই। মামলার নথি সংগ্রহ ও প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন।
জবাবে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার প্রসিকিউটরের কাছে জানতে চান, নথি ছাড়া, প্রস্তুতি ছাড়াই শুনানিতে চলে আসলেন? কোর্টের বেঞ্চ অফিসারের কাছে থাকা নথি সংগ্রহ করে সাক্ষ্য শুরু করতে পারতেন।
জবাবে প্রসিকিউটর বলেন, মাই লর্ড, নথি সংগ্রহ করতে পারিনি।
এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান প্রসিকিউটরকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, আপনি প্রসিকিউশন কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই চলে এসেছেন? এটা সর্বোচ্চ আদালত। এটা নিম্ন আদালত নয়। আন্তর্জাতিক আদালত। এখানে শুনানিতে আসার আগে মামলার নথিসহ প্রস্তুতি নিয়ে আসবেন। এটা আইনমন্ত্রী বা আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আদালত মনে করবেন না। এখানে শুনানি করতে আসলেন, মামলার নথি ছাড়া কেন আসলেন? নথি নাই, পরে আপনারাও নাই হয়ে যাবেন।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান অপর প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিমকে উদ্দেশ করে বলেন, চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সাহেব অভিজ্ঞ মানুষ। তাদের সহযোগিতা নিয়ে আসবেন না? সারাদেশের মানুষ এ ট্রাইব্যুনালের বিচারের দিকে তাকিয়ে আছে।
এ সময় প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, মাই লর্ড, মামলাগুলোর রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ৫ আগস্টের পরপরই ট্রাইব্যুনালের অনেক নথি গায়েব করে দেওয়া হয়। কেননা পূর্বের তদন্ত সংস্থা, প্রসিকউশন সবাই ফ্যাসিবাদের দোসর ছিল। তারা ৫ আগস্টের পর অনেক নথি গায়েব করে দিয়েছে। একটু সময় দেন। পরে আদালত এ মামলার পরবর্তী শুনানি ১০ আগস্ট দিন ধার্য করেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের শহীদুল্লাহ ফকিরকে ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার কাকনহাটি গ্রামের বাসিন্দা শহীদুল্লাহ ফকির (৭২)। তিনি ওই গ্রামের প্রয়াত মৌলভী কমর উদ্দিন ফকিরের ছেলে। তার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ হলেও তিনি ঢাকার বনানী এলাকায় একটি বাসায় বসবাস করতেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ২০২০ সালের ২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়।