হেলে পড়েছে সাততলা ভবন, ঝুঁকিতে ২১ পরিবার

ফটিকছড়ি পৌরসভা সদরে মো. আবদুল খালেকের সাত তলা ভবন পাশের ছয়তলা ভবনের গায়ে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আগে দুই ভবনের মাঝের ফাঁকা স্থান অল্প থাকলেও বর্তমানে সাত তলা ভবনটি পাশের ভবনকে ছুঁয়ে ফেলেছে, ফলে ২১টি পরিবার বিপৎসীমার কিনারায় বসবাস করছে।
স্থানীয়রা জানায়, ২০১৯ সালে আবদুল খালেক পৌরসভা এলাকার বিএস ৭৮৫৫নং দাগে সাত শতক জমির ওপর ভবন নির্মাণ শুরু করেন। পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে তিনি প্রথমে ছয় তলা করে বসতি স্থাপন করেন, পরে নামমাত্র অনুমতি ছাড়াই আরও এক তলা তুলে নেন। ২০২১-২২ সালে এখানে বসবাস শুরু হলে প্রথম দিকে তিন-চার ইঞ্চি হেলে পড়তে থাকে। মৌখিক অভিযোগের পর কর্তৃপক্ষ মালিককে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তাগাদা দেন, তবে তাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভবনটিতে অন্তত ২১টি পরিবার বাস করেন। পাশের ভবনের ওপর ভর করেছে ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি। খালি চোখে বিষয়টি অনেকে দেখলেও কর্তৃপক্ষ কিছুতেই দেখেন না। বিষয়টি সবাইকে ভাবায়।
ভবনের পাশে বসবাসরত মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, এটির অবস্থা খুবই খারাপ। এটি বর্তমানে ঝুঁকে পড়েছে প্রায় ১৮ থেকে ২০ ইঞ্চি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটিতে অনেক লোকের বাস থাকলেও দেখার কেউ নেই। যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।
ফটিকছড়ি পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রাজীব বড়ুয়া বলেন, ভবনটির ছয় তলার অনুমোদন আছে। পরে অন্যায়ভাবে তিনি সাত তলা করেছেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কনসার্টিং প্রতিষ্ঠান থেকে ‘ঝুঁকিমুক্ত’ সনদ দিতে বলা হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ভবনটির মালিক মো. আবদুল খালেক প্রবাসে থাকেন। চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তার মুঠোফোনে কল দিলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ভবনটির তত্ত্বাবধান করেন স্বজন মো. নেজাম উদ্দিন বুলবুল। তার সাথে যোগাযোগ করা হলে নেজাম উদ্দিন বুলবুল সাংবাদিক জেনে শুরুতেই বিমাতাসূলভ আচরণ করেন। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আপনার মত বহু সাংবাদিক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন। আপনি কে? আপনাকে এসব বিষয় বলব কেনো? পরে তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, ‘ভবনটি করার আগে পৌরকর্তৃপক্ষ অনুমোদন দিয়েছেন। বুয়েট পরীক্ষিত প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণের বিষয়টি অবান্তর।’
ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, জেনেছি ভবনটি কিঞ্চিৎ হেলে পড়েছে। যেহেতু এখনও কোনো স্ট্রাকচারাল ক্ষতি হয়নি, তাই বাসিন্দারা এখনও আছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ পেলে বিষয়টি দেখা হবে। তবে বিষয়টি পুরোই ইউএনওর এখতিয়ার।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঠিক কী কারণে ভবনটি হেলেছে, সে বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। ভবনের বাসিন্দাদের কেউ বলছেন, আগে থেকেই খানিকটা হেলে ছিল। কেউ বলছেন, ইদানিং এ ঘটনা ঘটেছে। আমরা বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।