চলাচলের পথ বন্ধ, জামালপুরে শতাধিক মানুষ ঘরবন্দি

জামালপুরের মাদারগঞ্জ নামেই প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, কিন্তু বাস্তবে নাগরিক সেবা যেন শুধুই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষুদ্র জোনাইল এলাকার অন্তত ২০টি পরিবার গত ১৫ বছর ধরে রাস্তাহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি তাদের একমাত্র বিকল্প চলাচলের পথটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব পরিবার এখন কার্যত ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন।
ক্ষুদ্র জোনাইল এলাকার এসব পরিবার দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী একজনের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করতেন। তবে সম্প্রতি সেই পথ বন্ধ করে দেওয়ায় নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ শতাধিক মানুষ কোনোভাবে ঘর থেকে বের হতেও পারছেন না। জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা বা প্রয়োজনে কারও মরদেহ বের করে নেওয়ার মতোও কোনো পথ নেই।
ভুক্তভোগী ভ্যানচালক ফজলু মিয়া বলেন, যে সরু পথ দিয়ে কোনো রকমে ভ্যানগাড়ি বের করতাম, সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে ভ্যান চালাতে পারছি না। সংসারে খাবার নেই, সন্তানদের মুখে তুলে দেওয়ার মতো কিছু নেই।
আরেক বাসিন্দা বেলু বেগম বলেন, পৌরসভায় বছরের পর বছর ট্যাক্স আর ভ্যাট দিচ্ছি। অথচ আমাদের একটা চলাচলের রাস্তা পর্যন্ত নেই। কেউ মারা গেলে মরদেহ বের করব কোন পথে? এ কেমন পৌরসেবা?
স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্ষায় জলাবদ্ধতা, শুষ্ক মৌসুমে ধুলার ঝড়, দুই সময়েই ভোগান্তি চরমে ওঠে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থাও নেই। দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভায় বারবার অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় বাসিন্দা বজলুর রশিদ বলেন, সারা জীবন ট্যাক্স দিছি, কিন্তু কোনো সুবিধা পাইনি। নাগরিক সুবিধা কাগজে আছে, বাস্তবে নাই।
এই দুরবস্থা নিয়ে পার্শ্ববর্তী এলাকার কয়েকজন মন্তব্য করেছেন, পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হয়েও এমন নাগরিক বঞ্চনা বর্তমান সময়ে নজিরবিহীন। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, নিয়মিত কর দেওয়া সত্ত্বেও যদি চলাফেরার মৌলিক অধিকারটুকু না থাকে, তবে এই পৌরসভার অস্তিত্বই বা কী কাজে?
মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক নাদির শাহ বলেন, পৌরসভা রাস্তা নির্মাণ করতে পারে, তবে জমি কিনে দিতে পারবে না। সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব। তবে সব সমস্যা একসঙ্গে সমাধান সম্ভব নয়।