জিআই স্বীকৃতি পেল ভোলার ‘মইষা দই’

ভোলার দুই শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মহিষের দুধের কাঁচা টক দই, স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘মইষা দই’, ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে ভোলার জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান ভোলাবাসীর পক্ষ থেকে জিআই সনদ গ্রহণ করেন।
ভোলার চরাঞ্চলে মহিষ পালনের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এখানে বসবাসকারী মানুষ বংশ পরম্পরায় মহিষ পালন করে আসছেন। চরের খোলা মাঠে বিচরণ করে ঘাস খাওয়া মহিষ থেকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ টন দুধ সংগ্রহ করা হয়। ভোলার ২১টি চরে প্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার মহিষ পালন করা হয় ৬৯টি বাথানে। এই দুধ দিয়েই তৈরি হয় বিখ্যাত ‘মইষা দই’।
স্থানীয়রা জানান, ভোলার দই শুধু খাবার নয়, এটি একটি ঐতিহ্য। পারিবারিক, সামাজিক কিংবা ঘরোয়া কোনো আয়োজনেই দই ছাড়া আয়োজন সম্পন্ন হয় না। দই সাধারণত ভাত, মুড়ি, চিড়া কিংবা গুড় বা চিনি মিশিয়ে খাওয়া হয়। গরমের দিনে অনেকে দইয়ের সঙ্গে পানি ও চিনি মিশিয়ে ঘোল তৈরি করে খান।
টক দই তৈরি করা খুব সহজ। সাধারণত মাটির টালিতে দুধ বসিয়ে ৮ থেকে ১২ ঘণ্টায় দই হয়ে যায়। গরমে ৮-১০ ঘণ্টা, শীতে একটু বেশি সময় লাগে। দই তৈরিতে ব্যবহার হয় শুধুমাত্র খাঁটি কাঁচা দুধ। অনেকে দুধে পানি মিশিয়ে দই তৈরি করায় এর মান নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক বিক্রেতা।
ভোলায় প্রতিদিন বাথানিরা মণে মণে দুধ নিয়ে বাজারে যান। সেখান থেকে দই ব্যবসায়ীরা দুধ কিনে বিভিন্ন আকারের মাটির পাত্রে দই বসান। এক লিটার দই বিক্রি হয় ১৮০ থেকে ২২০ টাকা, দেড় লিটার ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, আর ছোট আকারের ৬০০ থেকে ৮০০ গ্রাম দই ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়।
জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় দইয়ের পরিচিতি আরও বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর ভোলার জেলা প্রশাসক পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরে আবেদন করেন। এরপর পণ্যটি ‘জিআই-৫৫’ নম্বরে তালিকাভুক্ত হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) ভোলা জেলার সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী বলেন, এই স্বীকৃতি ভোলার জন্য গর্বের বিষয়। এতে মহিষ পালন ও দই উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলেছে। আমরা চাই, এর সুনাম ধরে রাখা হোক এবং দেশের বাইরে রপ্তানিও হোক।
ভোলা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুনিরুল ইসলাম বলেন, মইষা দইয়ে আছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। এই দইয়ে প্রচুর উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যা হজমে সাহায্য করে। এছাড়া এতে থাকে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও নানা ধরনের ভিটামিন।
তবে এত সম্ভাবনার পরও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। মহিষ চারণভূমির অভাব, খাদ্যের সংকট ও চিকিৎসা সেবা না থাকায় অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন। জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান আশ্বাস দিয়েছেন, এই স্বীকৃতি পাওয়ার পর দই উৎপাদন ও মহিষ পালনকারীদের পাশে প্রশাসন থাকবে।