‘পুরো বাংলাদেশকে হাসপাতাল বানালেও মুক্তি মিলবে না’

রোগ প্রতিরোধে মনোযোগ না দিলে পুরো বাংলাদেশকে হাসপাতাল বানালেও মুক্তি মিলবে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম। আজ বুধবার (২৮ মে) জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের (আইপিএইচএন) উদ্যোগে রাজধানীর মহাখালীতে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, পুষ্টিহীন হলে মস্তিষ্ক বিকশিত হবে না। এতে কাজে মনোযোগ থাকবে না, কার্যক্ষমতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাবে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, পুষ্টি শুধু খাদ্যের বিষয় নয়, খাবার কীভাবে তৈরি হবে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টিকর তরকারির আয়োজন করা হলেও রান্নার প্রক্রিয়া ও সেটি মুখরোচক করতে গিয়ে খাবারে পুষ্টিগুণ থাকছে না। এদিকে খাবার উৎপাদন হচ্ছে কৃষিতে। সেখানে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হচ্ছে। সেই রাসায়নিক আমরা খাচ্ছি। ফলে সুস্থ জাতি গঠনে কৃষি, মৎস্য থেকে শুরু করে সব কিছুতে হাত দিতে হবে।
এ সময় মাঝেমধ্যে একেক অসুস্থতায় দেশের অর্জনগুলো ম্লান হয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন নুরজাহান বেগম। প্রশ্ন করেন, ডেঙ্গু কিংবা চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাবে কেন?
শিশুদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পথে বিভিন্ন অন্তরায়ের কথা তুলে ধরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, এখন মাঠ নেই, উঠান নেই। শিশুরা কী করে? তারা মোবাইল, ইন্টারনেট ও ফাস্টফুডে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এ থেকে উত্তরণে খেলাধুলা ও দূষণমুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নানান আন্দোলন দেখছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত মাঠের জন্য কেউ আন্দোলন করল না। দূষণমুক্ত শহর ও খেলার মাঠের জন্য আন্দোলন করুন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ডা. সারোয়ার বারী বলেন, সচেতনতার পাশাপাশি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
পুষ্টির সঙ্গে খাদ্য, কৃষি ও স্থানীয় মন্ত্রণালয়ও জড়িত উল্লেখ করে সচিব বলেন, তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় প্রয়োজন। উন্নয়ন বাজেটের বাইরেও রাজস্ব খাতে পুষ্টি সংক্রান্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া জরুরি।
ডা. সারোয়ার বারী বলেন, সাধারণ শিক্ষার কারিকুলামের পাশাপাশি মেডিকেল, নার্সিং ও ম্যাটসের কারিকুলামে পুষ্টিশিক্ষার অন্তর্ভুক্তি প্রয়োজন। দ্রুত কাজ শুরু হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন বলেন, জীবের টিকে থাকার জন্য বিভিন্ন সূত্র থেকে যে শক্তি সংগ্রহ করে থাকে, সেটিই পুষ্টি। কিন্তু বাংলাদেশে এখনও ২৮ শতাংশ শিশু খর্বাকৃতিতে ভুগছে। ৯% শিশু ওয়েস্টিং (উচ্চতার তুলনায় ওজন অস্বাভাবিক কম)। এই অবস্থায় রাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশে মানুষের সচেতনতা প্রয়োজন।
অপুষ্টির পাশাপাশি শিশুরা ওভার নিউট্রিশনেও (অতিরিক্ত পুষ্টি) আক্রান্ত হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বলেন, এতে শিশুদের স্থূলতা বাড়ছে। এর কারণে বাড়ছে অনেক রোগ।
জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম সাইফুল ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত জনসংখ্যা ও জনসচেতনতার অভাবে অভীষ্ট লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। পুষ্টিকর খাবার ও খাদ্যে বৈচিত্র্য না থাকায় অপুষ্টি বাড়ছে। এ সময় গত ১০ মাসে পুষ্টি বিষয়ক অনেক স্ট্র্যা টেজি প্ল্যান ও অ্যাকশন প্ল্যান অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সরকারের ২৩টি মন্ত্রণালয় পুষ্টির সঙ্গে জড়িত বলে জানান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (সচিবের রুটিন দায়িত্ব) খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, শহরের মানুষের সঙ্গে গ্রামের মানুষের পার্থক্য এখন তেমন একটা নেই। কেউ এখন হাঁটে না। স্কুল-কলেজের বড় একটা অংশই স্থূলতায় ভুগছে। এমনকি শিক্ষিত প্রবীণদের মধ্যেও সচেতনতার অভাব রয়েছে।
এ থেকে উত্তরণে জীবনাচারের পরিবর্তন জরুরি উল্লেখ করে খোরশেদ আলম বলেন, গ্রামে-গঞ্জেও এখন ফাস্টফুডের দোকান। ফলে সারা বছরই সচেতনতা ক্যাম্পেইন চালানো প্রয়োজন।
জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. রিজওয়ানুর রহমান। এতে আরও বক্তব্য দেন নিপসম পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জিয়াউল ইসলাম ও আইপিএইচএন পরিচালক ডা. রওশন জাহান আক্তার আলো প্রমুখ। এতে পুষ্টি সপ্তাহের কার্যাবলী ও পুষ্টিতথ্যের উপর প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ্লাইড নিউট্রিশনিস্ট ডা. জয়াশীষ রায়।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী দিনে আলোচনা সভার পাশাপাশি নিপসম প্রাঙ্গণে পুষ্টিমেলার আয়োজনও করা হয়।