থানায় এইচএসসির প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলায় ওসিসহ আরও চার পুলিশ প্রত্যাহার

নওগাঁর ধামইরহাট থানায় রক্ষিত এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলা অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) চার পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
গতকাল রোববার (২২ জুন) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নওগাঁর পত্নীতলা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম।
প্রত্যাহার হওয়া চারজন হলেন- ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক, কনস্টেবল রেজুয়ানুর রহমান, আতিকুর রহমান ও মেহেদী হাসান। তাদের সবাইকে নওগাঁ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এর আগে আরও দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তারা হলেন- ধামইরহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাকিরুল ইসলাম ও কনস্টেবল ইকবাল হোসেন। এ নিয়ে মোট ছয় পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
পুলিশ সুপার মো. শরিফুল ইসলাম জানান, আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার বেশ কয়েকটি প্রশ্নপত্রের বাক্স ধামইরহাট থানা হেফাজতে রাখা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী এগুলো থানার মালখানা কক্ষে সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও কিছু বাক্স রাখা হয় আসামি রাখার হাজতখানায়। গত মঙ্গলবার রাতে একটি হত্যা মামলার আসামিকে ওই হাজতখানায় রাখা হয়। গভীর রাতে তিনি ট্রাঙ্কের সিলগালা উঠিয়ে তালা খুলে ফেলেন এবং প্যাকেটবন্দি অবস্থায় থাকা প্রশ্নপত্র বের করে হাজতের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেন। এমনকি কয়েকটি কপি ছিঁড়েও ফেলেন।
পরদিন সকালে বিষয়টি থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তার নজরে আসে। ঘটনার পরপরই ওই দিন লকআপ বা হাজত পাহারায় দায়িত্বে থাকা একজন এসআই এবং একজন কনস্টেবলকে প্রত্যাহার করে নওগাঁ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে ঘটনার গভীরতা ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রোববার (২২ জুন) ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) আরও চার পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য কিংবা অন্য কারও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান, থানায় থাকা অবস্থায় যে ব্যক্তি প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলেন, তিনি একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে হাজতে ছিলেন। ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে সরকারি সম্পদ বিনষ্টের অভিযোগে নতুন একটি মামলা দায়ের করে ধামইরহাট থানা পুলিশ। পরে গত বুধবার তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে, থানায় রক্ষিত প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক খোলা অবস্থায় পাওয়ার ঘটনায় রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার ইতিহাস দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্নপত্র বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আ.ন.ম মোফাখখারুল ইসলাম জানান, ইতিহাস বিষয়ের যে সেটটি থানায় নষ্ট হয়েছে, সেটিতে আর পরীক্ষা নেওয়া হবে না। রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলায় আগামী ১৯ জুলাই বিকল্প সেটে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
নওগাঁ জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ট্রাঙ্ক খোলা পাওয়ার পর জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) সাদিয়া আফরিন বলেন, প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে মোট ৫০টি কপি ছিল এবং সবগুলোই উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও কয়েকটি ছেঁড়া অবস্থায় পাওয়া গেছে, তবে কোনো প্রশ্নপত্র হারিয়ে যায়নি।