‘শহরের ইকো সিস্টেম একবার নষ্ট হলে তা পুনর্গঠন কঠিন’

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, শহরের ইকো সিস্টেম একবার নষ্ট হলে তা পুনর্গঠন কঠিন হয়ে পড়ে। তাই আমাদের শহরের প্রতিবেশ রক্ষায় আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) কর্তৃক গৃহীত তিন মাসের বনায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
‘সবুজে ঢাকা, সুস্থ নগর’—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে পরিবেশ সংরক্ষণ ও সবুজ নগর গঠনের লক্ষ্যে তিন মাসের বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
বৃহস্পতিবার সকালে পূর্বাচল নতুন শহরের হারারবাড়ি চত্বরে ডিএনসিসির উদ্যোগে এ উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘গাছ শুধু রোপণ করলেই হবে না, তাদের যত্ন ও রক্ষণাবেক্ষণও নিশ্চিত করতে হবে। সবুজ পরিসর বাড়িয়ে একটি বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
এই সময়োপযোগী উদ্যোগ নগরের পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য, শহরের সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
এজাজ তার বক্তব্যে বলেন, ঢাকার পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, বায়ুদূষণ হ্রাস ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে ডিএনসিসি ধারাবাহিকভাবে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এই বর্ষা মৌসুমে তিন থেকে পাঁচ লাখ গাছ লাগানোর লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
প্রশাসক আরও বলেন, ‘ঢাকাকে একটি ন্যায্য শহর হিসেবে গড়ে তুলতে হলে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। জনস্বাস্থ্য সংকট দূর করতে হলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, আর সে উদ্দেশ্যেই এ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।’
ডিএনসিসির সবুজায়ন কার্যক্রমের আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নগরের সড়ক বিভাজক, পার্ক, খেলার মাঠ, কবরস্থান, খালপাড় ও নিম্ন আয়ের বসবাসকারী এলাকায় প্রায় ৭৭ হাজার গাছ রোপণ করা হয়েছে। এসব বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে বনজ, ফলদ, ঔষধি ও শোভাবর্ধনকারী প্রজাতি।
ভবিষ্যতের নগর উন্নয়নে ডিএনসিসির পরিকল্পনায় রয়েছে—১২০ কিলোমিটার মিডিয়ান ও ১০৮ কিলোমিটার খালপাড়ে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ।
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বন অধিদপ্তর ও রাজউকের সঙ্গে যৌথভাবে মাস্টারপ্ল্যানভিত্তিক নগর বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
বিশেষ করে পূর্বাচল নতুন শহরের ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ লেকপাড় ও গ্রিন বেল্ট এলাকায় ব্যাপক সবুজায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
বনায়ন কার্যক্রমে নাগরিকদের সম্পৃক্ত করতে ডিএনসিসি চালু করেছে ‘বৃক্ষ সেবা ও ছাদবাগান সহায়তা কেন্দ্র’। নগরবাসী এই সেবার জন্য www.thegreensavers.org/treehospital ওয়েবসাইটে ভিজিট করে অথবা ০১৯০৯১১০৬০০ নম্বরে কল করে তথ্য ও সহায়তা নিতে পারবেন।
বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শেষে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ঢাকার বনানীতে ‘জিরো সয়েল’ কর্মসূচিরও উদ্বোধন করেন।
এ সময় উপদেষ্টা বলেন, ‘নগরবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণে এই কর্মসূচি সফল হলে আমাদের শহরের বায়ুর মান উন্নত হবে, আর আমরা বুক ভরে শ্বাস নিতে পারব।’
ডিএনসিসি প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা ঢাকা শহরের সব খোলা মাটি সবুজ চাদরে ঢেকে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ‘জিরো সয়েল’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—রাজউক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মো. রিয়াজুল ইসলাম, প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীসহ ডিএনসিসি, বন অধিদপ্তর ও রাজউকের কর্মকর্তাবৃন্দ।