জোটবদ্ধ ইসলামি দলগুলো আগামীর প্রধান রাজনৈতিক শক্তি : রেজাউল করিম

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ রেজাউল করিম বলেছেন, ‘ইসলামপন্থিদের ঐক্যের ব্যাপারে গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। জোটবদ্ধ ইসলামি দলগুলো হবে আগামী দিনের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।’
আজ শনিবার (২৮ জুন) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন দলটির আমির।
রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকের এই জনসমুদ্র পিআর পদ্ধতির পক্ষের। মৌলিক সংস্কারের প্রশ্নে কেউ কেউ দ্বিমত পোষণ করছে। সেটি হলে জুলাই শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে।’
ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কোনো ক্ষমা নেই। পালিয়ে থেকে অনেকেই উসকানিমূলক কথা বলে যাচ্ছে। তারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। সংসদের উভয় কক্ষেই আনুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব থাকবে। এবার ইসলামপন্থি দলগুলোর ব্যাপারে গণপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। সংস্কার, বিচার আর নির্বাচন আয়োজনে অটল থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে। সরকারের সহযোগিতায় কাজ করবে ইসলামী আন্দোলন।’
রেজাউল করিম বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক চায়। তবে কোনো আগ্রাসী সম্পর্ক চায় না। নারীরা জনসংখ্যার অর্ধেক। নারীর অধিকার সমুন্নত রাখাই ইসলামী আন্দোলনের অঙ্গীকার।’
রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘২৪ জুলাইয়ের ঘটনার সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল, তাদের বিচার না করে নির্বাচন করা চলবে না। গণহত্যা, গুম ও লুটপাটের জন্য ফ্যাসিস্ট চক্রের কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না।’
নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার দাবি করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সংসদে তাদের তত আসন থাকতে হবে। এটি জনগণের, জেনজি প্রজন্মের এবং সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের যৌক্তিক দাবি। প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের রায় নিতে হবে।’
চরমোনাই পীর রেজাউল করিম বলেন, ‘বারবার রক্ত দিয়েছি, কিন্তু সফলতা পাইনি, কারণ ভুল নেতা ও নীতির হাতে দেশ তুলে দিয়েছি। এবার ইসলামপন্থিদের ঐক্যের সময় এসেছে। এক বাক্সে ভোট নিলে ইসলামপন্থিরাই হবে বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। জুলাই অভ্যুত্থানের ফসল এই অন্তর্বর্তী সরকার। আমরা নিঃস্বার্থভাবে এই সরকারের পাশে আছি। তবে সরকার যেন সংস্কার ও নিরপেক্ষতার পথ থেকে বিচ্যুত না হয়।’
কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ী, প্রবাসী ও তরুণদের উদ্দেশে সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করব, ইনশাআল্লাহ। নারীদের সম্মান ও নিরাপত্তা ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার।’
ফিলিস্তিন নিয়ে রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বাইতুল মুকাদ্দাসের মুক্তির জন্য।’
উলামায়ে কেরামের মর্যাদা প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘আপনারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, কিন্তু অবহেলিত। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দায়িত্ব পেলে আপনাদের মর্যাদা রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করবে। এখন সময় ঘরে ফসল তোলার। গ্রামে-গঞ্জে, কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করে দাওয়াত দিন, ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরুন। আগামীর বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ।’

মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বোধিজ্ঞান ভাবনা কেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মূসা বিন ইজহার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমাদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন রাজি, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব মুহাম্মদ আখতার হোসাইন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দীন, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদিক হক্কানি ও এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু।