‘১১ মাসে একটিও গুম হয়নি’

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘আমরা জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তিতে গর্বের সঙ্গে জানাতে চাই, গত ১১ মাসে বাংলাদেশে একটিও গুম হয়নি। পুলিশ বাদী হয়ে একটিও মামলা করেনি। জুলাই বিপ্লবে প্রায় ২ হাজার ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে। ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গু হয়েছে। শহীদ আবু সাঈদ ও শহীদ মুগ্ধকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে। মুগ্ধের লাশের পোস্টমার্টেম না করে কীভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার প্রমাণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরাই এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন।’
আজ সোমবার (৩০ জুন) বিকেল ৫টায় মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমী অডিটরিয়ামে জেলা আইনীজীবী সমিতির ২নং বার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের সময় পাখির মতো মানুষ গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে যারা বেঁচে ছিলেন তাদের অনেকেই পঙ্গু হাসপাতলে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই পঙ্গু হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান। ভেতরে ঢোকার সময় সেখানে সমস্ত মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভেতরে ঢোকার পর আর্তনাদরত, অসুস্থ, পঙ্গু ও গুলিবিদ্ধ মানুষের ওপর থুথু ছিটানো হয়। ডাক্তার ও নার্সদের বলা হয়েছে কেউ যাতে চিকিৎসা না পায়।’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এমন একটি কালো অধ্যায় পেরিয়ে এসেছি। ওখানে যাদের সঙ্গে এরকম আচরণ করেছে তারাসহ কর্তব্যররত ডাক্তার ও নার্সরা সাক্ষী দিতে যায়নি। টেলিফোনে যখন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মরণনাস্ত্র ব্যবহার করে মানুষ হত্যা করো। সে রেকর্ড এখন আমাদের হাতে আছে। তার ফরেন্সিক রিপোর্টে এসেছে এটি তার কণ্ঠ। আমরা সেই বিচার করতে গিয়ে কলঙ্কের দায়ভার নেব না। নেব না বলেই আমরা বিচার উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সে বিচার প্রক্রিয়ায় যদি কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেই বিচারিক প্রক্রিয়ায় যদি কেউ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করে, আমরা তাদেরকেও আইনের আওতায় এনে জনসম্মুখে ন্যায়বিচারের চেষ্টা করব। এটা আমাদের প্রত্যয় ও অঙ্গীকার।’
মো. আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে পুলিশ বাদী হয়ে ৬০ লাখ ভুয়া ও মিথ্যা মামলা করেছে। সাড়ে চার হাজার মানুষকে ক্রসফায়ার করেছে। ৭০০ মানুষকে গুম করেছে। আইনের শাসনকে নসাৎ করেছে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের দিনের ভোট রাতে করা হয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। মানুষের প্রতি অবিচারের বীজ বপন করা হয়েছে। খুনের রাজনীতি চালু হয়েছে। এই ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের বিপক্ষে জনতা তার রায় প্রদানের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কখনো মানুষের হৃদয়য়ের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হয় না। ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের জন্য ১৭ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাতের জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে। এই রায়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র হরণের কারণে মানুষকে রাজপথে নামতে হয়েছে। রাজপথের সেই লড়াই সংগ্রামের পথ ধরে আমরা হারিয়েছি প্রায় ৭০০ সহকর্মীকে। যারা গুমের শিকার হয়েছে। সাড়ে চার হাজার সহকর্মী হারিয়েছি। যাদেরকে বলা হয়, ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য গত ১৭ বছরের প্রায় ৬০ লক্ষাধিক মানুষের বিরুদ্ধে গায়েবি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার অধিকাংশেরই বাদী ছিল পুলিশ।’
আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন মৌলভীবাজারের জেলা ও দায়েরা জজ মো. খাদেম উল কায়েস, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, মৌলভীবাজার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ এনায়েত কবির সরকার, জেলা পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ টি এম ফয়েজ উদ্দিন, পিপি অ্যাডভোকেট ড. আব্দুল মতিন চৌধুরী, জিপি অ্যাডভোকেট মামুনুর রশিদ।
স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট বকশী জুবায়ের আহমদের সঞ্চলানায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রবীণ আইনজীবী শান্তি পদ ঘোষ, অ্যাডভোকেট সুনীল কুমার দাস, অ্যাডভোকেট নিয়ামুল হক ও অ্যাডভোকেট আব্দুল ওয়াহিদ।
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল জেলা আইনীজীবী সমিতির ২নং বার ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ফলক উম্মোচন করেন।
জেলা ও দায়রা জজ মো. খাদেম উল কায়েস বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের জজ এনায়েত কবির সরকার, পুলিশ সুপার এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য অ্যাডভোকেট এ টি এম ফয়েজ উদ্দিনসহ অন্যন্যরা।