সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াত আমিরের হঠাৎ অসুস্থতা : হতবিহ্বল নেতাকর্মীরা

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতে ইসলামীর জাতীয় সমাবেশ চলাকালে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বক্তব্য দিতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে নেতাকর্মীদের মধ্যে হতবিহ্বল অবস্থা তৈরি হয়। বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে শফিকুর রহমান মঞ্চে উঠে বক্তব্য শুরু করেন, যেখানে লাখ লাখ নেতাকর্মী তার বক্তব্যের অপেক্ষায় ছিলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলতে থাকেন, ‘আগামীর বাংলাদেশটা কেমন হবে? আমি বলি আরেকটা লড়াই হবে, ইনশাআল্লাহ। একটা লড়াই হয়েছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে। আরেকটা লড়াই হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, ইনশাআল্লাহ। এই দুর্নীতির মূল উৎপাটন করার জন্য যা দরকার, আমরা তারুণ্য এবং যৌবনের শক্তিকে একত্রিত করে সেই লড়াইয়েও ইনশাআল্লাহ বিজয় লাভ করব। প্রিয় ভাইয়েরা, জামায়াত ইসলামী যে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়বে, তার প্রমাণ কী? তার প্রথম প্রমাণ হচ্ছে...।’ ঠিক এ বাক্যটি শেষ করার আগেই বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে জামায়াতের আমির ডায়াস থেকে মঞ্চের ফ্লোরে পড়ে যান।
এ দৃশ্য দেখে মঞ্চের পেছনের দিকে বসে থাকা সবাই দৌড়ে আমিরের কাছে চলে আসেন। এক শিশু চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে ‘আল্লাহ’। এমন আকস্মিক ঘটনায় সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জামায়াতের নেতাকর্মীরা একে অপরের কাছে জানতে চান, ‘কী হয়েছে উনার?’ ডায়াসের কাছে থাকা নেতাকর্মীদের আচরণ দেখে তখন সবাই বুঝে যান, জামায়াতের আমির অসুস্থ হয়ে পড়ে গেছেন।
এ পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীরা ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। তখনই মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়, ‘কেউ উঠবেন না। সবাই নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করুন। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। আপনাদের উত্তেজিত, উদ্বেলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’ এই ঘোষণায় সবাই চুপচাপ হয়ে যান। মঞ্চে এবং বড় স্ক্রিনের দিকে সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়।
কিছুক্ষণ পর শফিকুর রহমান আবার উঠে দাঁড়ান। সাথে সাথে তার পেছনে থাকা অনেক নেতাকর্মী তাকে ধরে রাখেন। শফিকুর রহমান বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, শুকরান। আলহামদুলিল্লাহ কাছিরান।’ সমাবেশস্থলে থাকা সবাই তখন উচ্চস্বরে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে ওঠেন। এই মুহূর্তে নেতাকর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। এক জামায়াত সমর্থক মন্তব্য করেন, ‘এই বয়সেও কী অদ্ভুত মনোবল উনার। এভাবেও বক্তব্য দেওয়া যায়।’

ডা. শফিকুর রহমান আবার বলতে শুরু করেন, ‘আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করি। আবার আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরেছি। আমি বলেছিলাম, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ আমরা ইনশাআল্লাহ সবাইকে নিয়ে গড়ব। আমরা কথা দিচ্ছি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যদি আল্লাহ তাআলার মেহেরবানি এবং জনগণের ভালোবাসা নিয়ে সরকার গঠন করে, তাহলে....।’
তবে এবারও তিনি কথা শেষ করতে পারেননি এবং আবারও পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন জামায়াতের নেতারা তাকে বসিয়ে দেন। নেতাকর্মীরা আবার দোয়া পড়া শুরু করেন এবং সমাবেশস্থল নিস্তব্ধ হয়ে ওঠে। সবার মনোযোগ তখন শফিকুর রহমানের দিকে। মাইকে আবার জানানো হয়, ‘আপনারা নিজ নিজ জায়গায় অবস্থান করুন। আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা আছেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলরা আছেন। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
এ সময় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, “আমিরে জামায়াত একটুখানি অসুস্থ হয়েছেন গরমের কারণে। কিন্তু উনি বারবারই চেষ্টা করছিলেন বক্তব্য দেওয়ার জন্য। ডাক্তাররা বলছেন, উনার আর বক্তব্য রাখা ঠিক হবে না। উনার যে বক্তৃতা…।”
তখনই জামায়াতের আমির মঞ্চের ফ্লোরে বসেই কথা বলার ইঙ্গিত দেন। এরপর ডায়াসটি সরিয়ে ফেলা হয় এবং মাইক্রোফোন তার কাছে তুলে দেওয়া হয়। তিনি বসেই বলতে শুরু করেন, ‘আল্লাহ যত সময় হায়াত দিয়েছেন, তত সময় মানুষের জন্য লড়াই করব, ইনশাআল্লাহ। বাংলার মানুষের মুক্তি হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।’ এরপর তিনি বসেই তার বক্তব্য শেষ করেন, যার মধ্য দিয়ে সমাবেশের সমাপ্তি টানা হয়।