পর্যটকে মুখর নেছারাবাদের দুইশ বছরের ভাসমান বাজার

পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো আটঘর-কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান এবং এর ভাসমান বাজার এখন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত। বর্ষা মৌসুমে নৌপথে ভেসে থাকা এ বাজার ও বাগান দেখতে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন হাজারো দর্শনার্থী।
এই অঞ্চলের পেয়ারা স্থানীয়ভাবে ‘স্বরূপকাঠির গৈইয়া’ নামে পরিচিত। ফলন মৌসুমে কৃষকরা নৌকায় করে এসব পেয়ারা ভাসমান বাজারে বিক্রি করেন। তবে পর্যটকরা চাইলে সরাসরি বাগান থেকেও পেয়ারা কিনতে পারেন।
পিরোজপুর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পেয়ারা কিনে নিয়ে যান। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই এখানকার পেয়ারার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত আলজেরিয়ার রাষ্ট্রদূত ড. আব্দুল ওহাব সাইদানি স্বপরিবারে এই পেয়ারা বাগান পরিদর্শন করেছেন। এতে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই পর্যটন কেন্দ্রের কদর বাড়ছে।
আদমকাটি গ্রামের কৃষক সুভাষ মণ্ডল বলেন, এ বছর পেয়ারা ফলন ভালো হয়েছে, পাশাপাশি পর্যটকদের কারণে বিক্রিও বেড়েছে। অনেকে এখন নৌকা চালানো, গাইড সার্ভিস দেওয়া, খাবারের দোকান ও হস্তশিল্প বিক্রির মাধ্যমে আয় করছেন।
সুভাষ মণ্ডল আরও বলেন, পেয়ারা বাগানকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট হোটেল, খাবার দোকান ও স্থানীয় হস্তশিল্পের স্টল। এতে একদিকে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি, অন্যদিকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক আলমগীর হোসেন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাসমান পেয়ারা বাজারের ভিডিও দেখে আগ্রহ তৈরি হয়। এখানে এসে আমি মুগ্ধ। নৌকায় বসে চারপাশের সবুজ পেয়ারা বাগান আর পাখির ডাক শুনে মনটাই ভালো হয়ে যায়। এটা বাংলাদেশের অনন্য সৌন্দর্য। এমন জায়গাগুলো আরও যত্ন করে রক্ষা করা দরকার।
পর্যটকদের নিরাপত্তা, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, পর্যটক, বাগান মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সুবিধার্থে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় দফা নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং নৌকা চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষা।
ইউএনও আরও বলেন, নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ফলে বাগান এলাকায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে এবং স্থানীয়দের আয়ের নতুন দ্বার খুলেছে এই পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে।