ভরা মৌসুমেও তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশের আকাল
এখন ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও ইলিশ অভয়াশ্রমকেন্দ্র তেঁতুলিয়া নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ ধরা পড়ছে না। বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে নদীতে জাল ফেলে খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশের অভাবে চরম হতাশ হয়ে পড়েছেন পটুয়াখালীর বাউফলের জেলে ও ব্যবসায়ীরা।
মাছ না পেয়ে হতাশ
জেলেরা ও ব্যবসায়ীরা জানান, জুলাই থেকে অক্টোবর ইলিশের ভরা মৌসুম। প্রতিবছর এই সময়ে তেঁতুলিয়া নদীতে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও এ বছর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। যে কয়েকটি মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তা বিক্রি করে খরচই উঠছে না।
চন্দ্রদ্বীপের জেলে সুজন হাওলাদার বলেন, ইলিশের এমন আকাল কোনো বছর দেখিনি। নদীতে মাছ নেই বললেই চলে। একটি ট্রিপ দিতে ৫-৭ হাজার টাকা খরচ হয়, কিন্তু মাছ মিলে ২-৩ হাজার টাকারও না। আমরা চরম কষ্টে আছি।
কালাইয়া বন্দরের মৎস্য ব্যবসায়ী মিন্টু জানান, প্রতিবছর এই সময়ে ৫০ থেকে ৬০ ককশিট (মাছ রাখার বাক্স) মাছ আড়তে আসতো। এ বছর ১০ থেকে ১২ ককশিট মাছও হয় না। লাখ লাখ টাকা জেলেদের দাদন দিয়েছি, কিন্তু তারা মাছ পায় না, আড়তে মাছ দিতে পারে না। ব্যবসা নেই বললেই চলে।
চড়া দামে ইলিশ, ভোগান্তিতে ক্রেতা
নদীতে মাছ কম থাকায় বাজারে ইলিশের দাম অনেক বেশি। গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতি কেজিতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দাম বেশি। বর্তমানে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার ৮০০ টাকা, এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের দুই হাজার ৪০০ টাকা, এক কেজি দুই হাজার ২০০ টাকা, ৮০০ গ্রাম এক হাজার ৯০০ টাকা এবং ৬০০ গ্রাম এক হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সাধারণ ভোক্তারা বলছেন, এক কেজি ইলিশ মাছের দাম দিয়ে এক মণ চাল কেনা যায়। দাম মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। গরিব মানুষ তো ইলিশ চোখেই দেখে না।
ইলিশ কমে যাওয়ার কারণ ও প্রশাসনের ভূমিকা
তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে জেলে ও ব্যবসায়ীরা অবৈধ জালের ব্যবহারকে দায়ী করছেন। তারা বলেন, কিছু অসাধু জেলে মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশের কতিপয় অসাধু সদস্যকে ম্যানেজ করে প্রজনন মৌসুমেও অবৈধ বাঁধাজাল ও চায়না জাল দিয়ে মাছের পোনা ও রেণু ধ্বংস করছে।
তবে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, মৎস্য সম্পদ রক্ষায় আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। লোকবল সংকটের কারণে আমরা পেরে উঠছি না। প্রশাসনকে ম্যানেজ করার অভিযোগকে তিনি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর নাব্যতা হ্রাস এবং পলি জমার কারণে ইলিশ স্বাচ্ছন্দ্যে নদীতে পরিভ্রমণ করতে পারছে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগস্টের শেষের দিকে সাগরের ইলিশের ডিম পরিপক্ক হলে তারা তেঁতুলিয়াসহ বিভিন্ন নদীতে বিচরণ করবে এবং জেলেরা তখন ব্যাপক মাছ পাবে।