নির্বাচন কমিশন পার্টি অফিসে পরিণত হয়েছে : হাসনাত আবদুল্লাহ

সংসদীয় আসন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে মারামারির ঘটনা প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, পুলিশ এখানে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। আমরা দেখলাম পুলিশ আমাদের নেতাকর্মীদেরকে কীভাবে নির্বাচন কমিশনে ঢুকতে বাধা দিয়েছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের কিভাবে ফ্রি এক্সিট দিয়েছে। এই নির্বাচন কমিশন পার্টি অফিস হয়ে গিয়েছে।
আজ রোববার (২৪ আগস্ট) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ সংসদীয় আসনের সীমানা নিয়ে আপত্তির শুনানিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের উপস্থিতিতে অংশগ্রহণকারীরা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে বিকেলে নির্বাচন কমিশন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আগামী নির্বাচন কেমন হতে পারে, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা কি হবে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি কি ভূমিকা রাখবে এবং পুলিশ কি ভূমিকা পালন করবে— সেটির প্রমাণ আজকে হয়ে গিয়েছে। আপনারা দেখেছেন, কিভাবে বিএনপির একজন নেত্রী বলছেন, আমরা চাইলে এখানে গুন্ডা নিয়ে আসতে পারতাম। অর্থাৎ গুন্ডার পৃষ্ঠপোষকতা উনারা দিয়ে আসছেন। আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশনের বাইরে লাঠিসোটা নিয়ে মহড়া দিচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনের অফিসের যদি এই অবস্থা হয়, সারা বাংলাদেশে বিএনপির যারা রয়েছে, এই গুন্ডাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে, তারা কীভাবে ভোটকেন্দ্র দখল করবে সেটির আজকে টেস্ট ম্যাচ হয়ে গিয়েছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, রুমিন ফারহানা যিনি হাসিনার কাছে ফ্লাটের জন্য আবেদন করেছেন, তিনি হাসিনার পতনে আমার মনে হয় সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ থেকেও বেশি আওয়ামী লীগ যাদেরকে মনে হয় তাদের মধ্যে রুমিন ফারহানা অন্যতম।
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে দলকানা একটি দলের প্রতি, একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যেভাবে নির্লজ্জের মতো কাজ করছে, তা আমরা যে নির্বাচনমুখী হচ্ছি তার অন্তরায় বলে মনে করছি।
এনসিপির এই নেতা বলেন, আমরা যখন নির্বাচন কমিশনের সাথে মিটিং করি তাদের এক ধরনের আচরণ থাকে। তারপর তারা একটা সময় চায়। ওই সময়ের মধ্যে কি হয় তা তারাই বলতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের রিমোট কন্ট্রোল কোথায় রয়েছে, তা আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, যারা কমিশনার রয়েছেন, আপনারা যদি মনে করেন আপনারা নিজেরা এই নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করতে পারবেন না, অন্য কেউ পরিচালিত করে আপনাদেরকে— তাহলে আপনারা মানুষের সামনে সেটি প্রকাশ করুন। না হয় নিকট অতীতে আমরা নুরুল হুদা কমিশনকে দেখেছি, তার পরিণতি দেখেছি, বাংলাদেশের মানুষ আবার কোনো মঞ্চস্থ নির্বাচনের দিকে যেতে চায় না।
নির্বাচন কমিশনে আজকের ঘটনার বিষয়ে বিএনপি কি অবস্থান নেয় সেটির প্রতি আমরা নজর রাখবেন বলে জানান এনসিরি এই নেতা।
পুলিশের উদ্দেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আপনারা দেখেছেন, নির্বাচনের আগের রাতে যে ওসিরা, যে এসপিরা যে পুলিশরা টাকা খেয়ে নির্বাচন করে দিয়েছে, ডামি নির্বাচন করে দিয়েছে, তাদের পরিণতি কি হয়েছে। জনগণের পক্ষে থাকেন, জনগণ আপনাদেরকে বাঁচাবে। কোনো রাজনৈতিক দল আপনাদেরকে শেল্টার দিতে পারবে না।
এনসিপির এ নেতা আরও বলেন, এই নির্বাচন কমিশনে বিভিন্ন পক্ষের লোক রয়েছে। একজন বিএনপিপন্থি। কেউ অন্যপন্থি, কেউ ডানপন্থি, কেউ বামপন্থি। আমরা চেয়েছিলাম বাংলাদেশপন্থি নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের যে ধরনের আচরণ তা আমরা আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব।
তিনি বলেন, আজকের ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়ে যাব এবং পর্যবেক্ষণ করব নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয় কিনা।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আতাউল্লাহ বলেন, আমাকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে শুনানিতে অংশ না নিতে। রুমিন ফারহানা ও তার গুন্ডা-পান্ডারা বলেছে, আমি যেন সরে যাই। ফোনে ও লোকজনের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয়েছে। আজকে যখন শুনানিতে আসি, আমাকে গেটে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, টেনে-হিঁচড়ে সরানোর চেষ্টা করেছে। তারপর আমি ১২টার আগ মুহূর্তে ভিতরে ঢুকি। দেখি, বিএনপি ও রুমিন ফারহানার লোকজন তাদের যুক্তি তুলে ধরছে। আমার সময় এলে দাঁড়াতেই রুমিন ফারহানা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। তার গুন্ডারা আমাকে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে মারধর করে। আমার সহযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ও যুবশক্তির নেতা সুমন মোস্তফাকেও তারা মারধর করে। সবকিছু ভিডিও ফুটেজে আছে, সিসিটিভিতে দেখা যাবে। আমি চাই রুমিন ফারহানাকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করা হোক। যদি বিচার না হয়, তাহলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগ করতে হবে।