ছোট যমুনা নদী এখন বদলগাছীর ডাস্টবিন

একসময়ের প্রাণবন্ত ‘ছোট যমুনা নদী’ এখন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার একমাত্র ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে। বাজারের নোংরা বর্জ্য, প্লাস্টিক, পলিথিন থেকে শুরু করে হোটেলের ক্ষতিকর বর্জ্য—সবকিছুই নির্বিচারে ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। যা শুধু নদীর অস্তিত্বই কেড়ে নিচ্ছে না, স্থানীয়দের জীবনও করে তুলেছে দুর্বিষহ।
নদীর পাশে জমে থাকা ময়লার ভাগাড় থেকে আসা দুর্গন্ধে পথচারীদের হাঁটাচলাও কঠিন হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এই ময়লার স্তূপ বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) আবাসিক রুম থেকে মাত্র ১০ ফুট দূরে অবস্থিত। অথচ প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন ঘটনা ঘটলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
একসময় যে নদীতে শিশুরা সাঁতার কাটত, জেলেরা মাছ ধরত এবং কৃষকরা সেচ দিত, সেই নদী এখন পচা-গলা আবর্জনার ভাগাড়। বর্ষার পানি বৃদ্ধি পেলেও তার সাথে ভাসছে শুধুই প্লাস্টিক আর পলিথিন।
নদীর পাশের মাইক্রোস্ট্যান্ডের চালক আব্দুল লতিফ বলেন, প্রতিদিন থানার পাশেই নদীতে ময়লা ফেলা হয়। একটু বাতাস হলেই দুর্গন্ধে এখানে থাকা যায় না। এখানে সরকারি স্কুল, বাজার ও থানা থাকা সত্ত্বেও ময়লা ফেলা বন্ধ হচ্ছে না।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ইবনে নূর বলেন, একসময় নদীর পানি ব্যবহার করা যেত। এখন কাছেই যাওয়া যায় না। অথচ অফিসগুলো নদীর একেবারে পাশে, কিন্তু কেউ দেখেও দেখে না।
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিসুর রহমান জানান, তার আবাসিক রুমের পাশেই এসব ময়লা ফেলা হচ্ছে। আমি গন্ধ পাওয়ার পর নিষেধ করেছিলাম, কয়েকদিন বন্ধ ছিল। আমি ছুটিতে থাকার সুযোগে তারা আবার ময়লা ফেলা শুরু করেছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকিতে আছে। এসব বন্ধ হওয়া উচিত।
পরিবেশবিদদের মতে, এভাবে দূষণ চলতে থাকলে শুধু নদী নয়, পুরো এলাকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, মাছ ও জীববৈচিত্র্য বিলীন হবে এবং ভূগর্ভস্থ পানিও দূষিত হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নওগাঁর সহসাধারণ সম্পাদক নাইস পারভীন বলেন, নদী দখল ও দূষণ বন্ধে প্রশাসন এবং নাগরিকদের সচেতন হতে হবে। অথচ প্রশাসন না দেখার ভান করছে। এভাবে চলতে থাকলে ছোট যমুনা আগামী এক দশকের মধ্যে একটি মৃত নদীতে পরিণত হবে।
এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি বলেন, আমি বিষয়টি দেখেছি। আমরা ময়লা ফেলার জন্য আলাদা জায়গা খুঁজছি। খুব দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে।