প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটে ব্যয় হবে ৪০০ কোটি টাকা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনেই পোস্টাদল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা। এ লক্ষ্যে কাজও এগিয়ে নিচ্ছে ইসি। এতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। তবে শুধু প্রবাসীরাই নয়, এবার কারাবন্দি ও ভোটের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তারাও একই পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন।
ইসি সূত্র জানায়, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে আলাদা করে ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প ইতিমধ্যে নেওয়া হয়েছে। তবে যারা চাকরি বা অন্য কাজে দেশের ভেতরে নিজ ভোটার এলাকাতে বসবাস করছেন না তাদেরও ভোটাধিকার নিশ্চিতে পোস্টাল ব্যালটের কথা ভাবা হচ্ছে। এজন্য নির্বাচনি বাজেটে এ অর্থের হিসাব ধরা হয়েছে। বাজেট শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাসউদ বলেছেন, আমরা পোস্টালে একটা স্ট্যাম্প লাগিয়ে দেব। ভোটার বিদেশ থেকে অনলাইনে আমাদের ওয়েবসাইটে ঢুকে নাম লিস্ট করবেন বা দেশে থেকেও করতে পারবেন, একই সিস্টেম। একটা ইনকান্ট্রি, আরেকটা আউটকান্ট্রি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, এর আগে প্রবাসী ভোটের পোস্টাল ব্যালটের বিধান থাকলেও কেউ এক্সজিকিউশনে যায় নাই। এবার আমরা ম্যাসিভ স্কেলে প্রবাসী ভোটের জন্য ব্যবস্থা করছি। আমি নিজেও কানাডা যাব। তাদের সঙ্গে কথা বলব। প্রবাসীদের ভোটের জন্য সামগ্রিকভাবে কথা বলব। সুবিধা-অসুবিধা জানতে চাইব। আমাদের অন্য কমিশনাররাও যাবেন। ইতিমধ্যে ইসির অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন দেশে গেছেন। টেকনিক্যাল অফিসাররা কাজ করছেন।
নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের যারা ভোটের দিনের দায়িত্বে থাকেন, তারা কোনোদিন ভোট দিতে পারেন না। এবার আমরা তাদেরও ভোটের ব্যবস্থা করব। এ দুটোই আমাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন ইনিশিয়েটিভ। এটাকে শুধু পোস্টাল ব্যালট বললে একটু ভুল হবে। এটা আইটি সার্পোটেড পোস্টার ব্যালট। যারা পোস্টালে ভোট দেবেন, তাদের রেজিস্ট্রেশনটা আমরা অনলাইনে করাব।
কমিটমেন্টের কথা স্মরণ করে সিইসি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির কাছে ওয়াদা করেছেন। আমি চাই উনার ডিগনিটি, অর্জন, কমিটমেন্ট ও ওয়াদা রক্ষিত হোক। আমার ওয়াদাটাও যেন রক্ষা হয়, আমিও জাতির কাছে ওয়াদা দিয়েছি। ইলেকশন কমিশনের ওয়াদা এবং প্রধান উপদেষ্টার ওয়াদা পূর্ণ হোক। সেই লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ইসির বাজেট শাখা জানায়, সিসি ক্যামেরা ও পোস্টাল ব্যালটের ব্যয় বাদ দিলে এবার প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা দিয়ে সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। এ বাজেটের সিংহভাগ যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুকূলে। স্বাভাবিকভাবে বাজেটের ৫৫-৬৫ শতাংশ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পায়। তবে, তা নির্ধারণ হবে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বিত সভায়।
এদিকে ইসির রোডম্যাপে নির্বাচনি বাজেট প্রস্তুত ও বাজেট বরাদ্দ-সংক্রান্ত কার্যক্রমের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, খাতভিত্তিক হারসহ দফাওয়ারি বিভাজনের আলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুকূলে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তাব প্রণয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর প্রতিনিধিদের সাথে সভা অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য তারিখ ১৬ নভেম্বর, শেষ করার সম্ভাব্য সময় ২০ নভেম্বর। এছাড়া ১৫ নভেম্বরে মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খাত ও দফাওয়ারি অর্থ বরাদ্দের হার নির্ধারণ করে প্রস্তাব প্রণয়ন করার কথাও রয়েছে।
উদার ইসি, মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টেও সুযোগ
নির্বাচন কমিশন সব প্রবাসীকে ভোটারকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদানের কার্যক্রম পুরোদমে চালাচ্ছে। প্রবাসীদের ভোটার করার ক্ষেত্রে অনেকটা উদার নীতি অবলম্বন করছে ইসি। সহজেই যেন তারা ভোটার হতে পারেন সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট দিয়েও নিবন্ধন আবেদনের সুযোগ পাবেন প্রবাসীরা। নতুন করে এই বিধানসহ আদর্শ পরিচালনা পদ্ধতির (এওপি) নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
নির্বাচনি বাজেটের বিষয়ে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাউসদ বলেন, ব্যয় কমাবার চেষ্টা করছি। কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় আরও কত টাকা কমানো যায়, কোথাও কিছু বাড়াতে হয় কি না— এসব বিষয় দেখা হচ্ছে।
যেভাবে প্রবাসীদের ভোট গ্রহণ করবে ইসি
ইসির রোডম্যাপে বলা হয়েছে, পোস্টাল ব্যালটে ভোটদান নিশ্চিতের জন্য AFD, MOFA, MOHA, MOEW, বাংলাদেশ ডাকবিভাগ, DIP, SB, BRC ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যে মোবাইল অ্যাপ তৈরি ও পরীক্ষামূলক (আউটকান্ট্রি ভোটিং-ওসিভি ও ইনকান্ট্রি ভোটিং-আইসিপিভি নিবন্ধন ও ট্র্যাকিং মডিউল) প্রতীক ও প্রার্থীদের সংযুক্ত করে চালাতে হবে। ১ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবরের পর্যন্ত মোবাইল অ্যাপের ট্রায়াল, নিরীক্ষা, ত্রুটি সংশোধন ও ডেভেলপমেন্টের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। এ ছাড়া চলতি মাস থেকে ওসিভি ও আইসিপিভির জন্য প্রচার, উদ্ভূতকরণ ও ভোটার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করবে ইসি। যা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এতে আরও বলা হয়েছে, ১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরে মধ্যে ব্যালট পেপার, নির্দেশিকা ও ঘোষণাপত্র মুদ্রণ করা হবে। ওসিভি ও আইসিপিভির জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হবে ১১ নভেম্বর, যা চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ডাকবিভাগ খামের কাস্টমাইজেশন করবে। ভোটারদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠানো হবে ২০ নভেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ শেষ হলেও ভোট দিতে পারবে ওসিভি ও আইসিপিভির আওতায় ভোটাররা। ভোট প্রদান ও ব্যালট পেপার দেশে ফেরত পাঠাতে হবে নির্বাচনের এক মাস আগে। এরপর কমিশন প্রতিটি ব্যালটে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার নাম লিখে তা সিল প্রেরণ করে দেবে।
ইসি আব্দুর রহমানেল মাসউদ বলেন, ভোটিংয়ের জন্য ভোটাররা নিবন্ধন করবেন। কে কোন সময় করবেন, আমরা চার রকম ব্যক্তির নাম দিয়ে রেখেছি, তার সময় দিচ্ছি। আর বিদেশ থেকে যারা দেবে তাদের জন্য কমিশন থেকে পাস হওয়ার পর সার্কুলার জারি করব যে, এত থেকে এত তারিখের মধ্যে আপনি নাম নিবন্ধন করবেন।
আব্দুর রহমানেল মাসউদ বলেন, আগে ব্যালট পাঠালে সেই ব্যালট পেপার ফেরত আসে না, ভোট দিতেও পারে না, আর এলেও শেষের দিকে আসত। এখন সেখানে আমরা ব্যালট পেপার না দিয়ে যত আমাদের মার্কা আছে সব মার্কা দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। উনি মার্কা অনুযায়ী ভোট দেবেন।
প্রতি পোস্টাল ব্যালটে সরকারি-বেসরকারিভাবে যত ব্যয়
বাজেট শাখা সূত্র জানায়, একটি পোস্টাল আনা-নেওয়া করতে ব্যালটপ্রতি সরকারিভাবে ব্যয় হবে ৫০০ টাকার মতো, আর বেসরকারিভাবে এটি দাঁড়াবে ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, গত ২৪ জুন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ওপর ভিত্তি করে অ্যাডভাইজরি কমিটির আইটি বেইজড পোস্টাল ব্যালটে ভোট নিয়ে আলোচনা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে ভোট দিতে আগ্রহীদের পোস্টাল ব্যালট পাঠানো ও ভোট শেষে তা ফেরত আনার বিষয়ে ডাকবিভাগ, ফেডএক্স, ডিএইচএল প্রতিনিধিরাও বৈঠকে মতামত তুলে ধরেন।
ডাক বিভাগ থেকে জানানো হয়, ডাক বিভাগের ইএমএস/রেজিস্টার্ড সার্ভিসে একজন ভোটারের ব্যালট পেপার প্রবাসে পাঠানো এবং ফেরত আনতে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ব্যয় হতে পারে।
এর আগে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছিলেন, পোস্টাল ব্যালট ব্যয়সাপেক্ষ পদ্ধতি। আনা-নেওয়া করতে ব্যালট প্রতি ৫০০ টাকা, এরপর ছাপানোর খরচও আছে। প্রতি এক লাখ ভেটারের জন্য সবমিলিয়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা লাগবে।