ভারত থেকে আরও বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ

বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। একইসঙ্গে দেশের তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ খাত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের বরাতে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ আমদানি ৭০ শতাংশ বেড়েছে। ভারতের বিদ্যুৎ আসছে প্রধানত আদানি পাওয়ারের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।
বাংলাদেশে ২০২০ সাল পর্যন্ত পূর্ববর্তী এক দশকে বিদ্যুতের চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশ আসে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। কিন্তু বর্তমানে গ্যাসের অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ ছাড়াও খরচ বাঁচাতে বিদ্যুৎ আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সামিট পাওয়ারের পরিচালক আদিবা আজিজ খান বলেন, খরচ সাশ্রয়ের বিষয় এটি। গ্যাস প্রয়োজন সার শিল্পের জন্য। অন্যদিকে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য উৎস থেকে সস্তায় বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।
আদিবা আজিজ এপেক সম্মেলনের সাইডলাইনে বলেছিলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমাদের গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। ভবিষ্যতে হয়তো গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ‘দেখা যাবে না’।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায়, গ্যাসের চাপজনিত কারিগরি ত্রুটির কারণে অনেক গ্যাস বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে চলছে না। আর রক্ষণাবেক্ষণ বা মেরামতের কারণে বন্ধ থাকা বা বিরতির কারণে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনও কমে গেছে।
নাম প্রকাশ না করে ওই কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, সরকারের হাতে খুব একটা বিকল্প ছিল না। ‘ব্ল্যাকআউট’ বা বিদ্যুতবিভ্রাট ঠেকাতে সরকার আমদানির পথ বেছে নিয়েছে। এছাড়া আদানির কাছে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ আছে।
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলে বিপিডিবি কর্তৃপক্ষ কোনো জবাব দেয়নি বলে রয়টার্স জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ মোট চাহিদার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ দশমিক ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ১১ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১২ দশমিক ৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ‘ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসে’র বাংলাদেশ-ভিত্তিক বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, মার্চ থেকে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। সে কারণেই মূলত সরকারকে আমদানি ও তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হয়েছে।
যদিও দেশে গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ৪৩ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ২৬ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে বাংলাদেশে এলএনজি আমদানি ২৪ শতাংশ বাড়লেও সরকারি তথ্য অনুযায়ী গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ১ দশমিক ২ শতাংশ।