নেপাল-বাংলাদেশের পরিণতিতে ভীত ভারত

ভারত ও বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালে কয়েক বছরের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো সরকার পতনের আন্দোলন সংগঠিত হলো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেছেন।
বিক্ষোভকারীরা সংসদ ভবনে হামলা চালিয়েছে। বেশ কয়েকজন রাজনীতিকের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সারা দেশে কারফিউ জারি করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অনেকের কাছে কাঠমান্ডুর এই দৃশ্য গত বছর বাংলাদেশের ও ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। খবর বিবিসির।
নেপালে চলমান অস্থিরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। গত মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্সে (সাবেক টুইটার) লেখেন,
নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। অনেক তরুণের জীবনহানি হওয়ায় আমি ব্যথিত। তিনি নেপালের জনগণের প্রতি শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে মোদি তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে একটি জরুরি নিরাপত্তা বৈঠকও করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, শ্রীলঙ্কার সংকটের মতোই নেপালের ঘটনায় ভারত অনেকটা অপ্রস্তুত ছিল। নেপালের কৌশলগত অবস্থানের কারণে যেকোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা ভারতের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহতা বলেন, চীনের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ড নেপালের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে যাওয়ার পথটি সরাসরি নেপালের মধ্য দিয়ে গেছে।
ভারত-নেপাল সম্পর্ক
নেপালের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে ভিন্ন। দুই দেশের মধ্যে ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটারের বেশি উন্মুক্ত সীমান্ত রয়েছে। এই অঞ্চলে নেপাল ও ভুটানই কেবল ১৯৫০ সালের একটি চুক্তির অধীনে ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে যাতায়াত ও কাজ করার সুবিধা পায়। প্রায় ৩৫ লাখ নেপালি ভারতে বসবাস ও কাজ করেন বলে ধারণা করা হয়।
তাছাড়া, ভারতের সেনাবাহিনীতে বিশেষ চুক্তির অধীনে ৩২ হাজার নেপালি গোর্খা সৈনিকও কর্মরত রয়েছেন। সংস্কৃতি ও ধর্মীয় দিক থেকেও দুই দেশের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। প্রতি বছর হাজার হাজার ভারতীয় তীর্থযাত্রী নেপালের পবিত্র হিন্দু মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেন। নেপাল তেল ও খাদ্যসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, এবং ভারত-নেপাল বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট: ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালে নতুন করে যে সরকারই গঠিত হোক না কেন, ভারতের জন্য তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা এক কঠিন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষ করে দেশটির যুবসমাজ পুরোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং চলমান দুর্নীতিতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জোট সার্ক নিষ্ক্রিয় থাকায় ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলোতে রাজনৈতিক পরিবর্তন ও অস্থিতিশীলতা সামাল দিতে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। বর্তমানে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তলানিতে, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে এবং মিয়ানমার গৃহযুদ্ধে জর্জরিত। মেজর জেনারেল অশোক মেহতা বলেন, ভারত তার ‘গ্রেট পাওয়ার’ উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে প্রতিবেশীদের থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল প্রতিবেশী অঞ্চল অপরিহার্য।