দাবি পূরণ না হলে আবারও গণঅভ্যুত্থান হবে : আনু মুহাম্মদ

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী ট্র্যাজেটি দিবসে আনু মুহাম্মদ বলেছেন, অক্টোবরের মধ্যে আমাদের দাবি পূরণ না হলে আবারও গণঅভ্যুত্থান হবে। আজ মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস পালিত হয়েছে।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, তৎকালীন বিএনপি জোট সরকারের সময় সম্পাদিত ছয় দফা চুক্তি অনুযায়ী এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার, দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লাখনি না করা, আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের নামে করা মামলা প্রত্যাহার ও নতুন মামলা না দেওয়া এবং এশিয়া এনার্জির সুবিধাভোগী দালালদের বিচার করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯ বছর কেটে গেলেও চুক্তির আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে, কিন্তু মূল দাবি এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। এশিয়া এনার্জি প্রতিনিয়ত নতুন ষড়যন্ত্র করছে এবং আন্দোলনকারীদের নামে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ফুলবাড়ীর কয়লা সম্পদ দেশের জনগণের। অথচ এশিয়া এনার্জি তা নিজের মালিকানা দেখিয়ে লন্ডন শেয়ার বাজারে বিক্রি করছে, কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জনগণ সব সময় দেশের সম্পদ রক্ষায় সজাগ। পুনরায় কোনো ষড়যন্ত্র হলে দেশপ্রেমিক মানুষ আগের চেয়ে কয়েকগুণ শক্তিশালী গণঅভ্যুত্থান ঘটাবে।
আনু মুহাম্মদ সতর্ক করে বলেন, ছয় দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন ও আন্দোলনকারী নেতাদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হলে অক্টোবর মাসে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। এ সময় সেই কর্মসূচিতে সবাইকে অংশগ্রহণের মাধ্যমে দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডি দিবস উপলক্ষে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য সকাল থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। একইসঙ্গে সেনাবাহিনীও টহল দিয়েছে।
২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির কয়লাখনি প্রকল্পবিরোধী আন্দোলনে তৎকালীন বিডিআরের গুলিতে তিনজন নিহত হন এবং আহত হন অনেক মানুষ। আন্দোলনের চাপে সরকার ৩০ আগস্ট ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’ স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়। সেই চুক্তি ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও বাস্তবায়ন হয়নি। বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ ব্যানারে দিবসটি পালন করে।
এ উপলক্ষে সকাল থেকে ফুলবাড়ী উপজেলা শাখা তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠন, নাগরিক সমাজ, ব্যবসায়ী সমিতি, রাজনৈতিক দল ও শ্রমিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথক কর্মসূচি পালন করে।
শোকযাত্রা শেষে শহীদ আমিন, সালেকিন ও তরিকুলের স্মৃতিতে ছোট যমুনা নদীর পূর্ব প্রান্তে নির্মিত শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। এ সময় শহীদ আমিন ও সালেকিনের পরিবারের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে টিপু বিশ্বাস, মোশাররফ হোসেন নান্নু, উপজেলা আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল, সদস্য সচিব জয় প্রকাশ গুপ্তসহ জেলা ও উপজেলা শাখার নেতারা শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। পরে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
আজ দুপুর ১২টার দিকে শহীদ স্তম্ভ চত্বরে তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার উদ্যোগে কয়লাখনিবিরোধী শোক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল।
সমাবেশে অতিথি বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় গণফ্রন্ট সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন নান্নু, বাসদ কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সাইফুল ইসলাম পল্টু।
জেলা ও উপজেলা শাখার নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রমথেশ শীল, সাম্যবাদী আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী সাইফুল ইসলাম, বাসদ জেলা আহ্বায়ক কিবরিয়া হোসেন, উপজেলা শাখা তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব জয় প্রকাশ গুপ্ত, সদস্য হামিদুল হক, সাবেক সদস্য সচিব সিপিবি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এস এম নূরুজ্জামান জামান, সদস্য সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া, উপজেলা শাখা জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক কমল চক্রবর্তী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত প্রসাদ জিতু, উপজেলা গণসংহতি আন্দোলনের আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান বাবু, দেশ প্রেমিক কৃষক ও ছাত্র-জনতার আহ্বায়ক হিমেল মণ্ডল, মৃত্তিকা খেলাঘরের মো. নাসিম, ফুলবাড়ী শাখা জাতীয় কমিটির সদস্য মো. হামিদুল হক ও মো. আব্দুল কাইয়ুম আনছারী।