লালমনিরহাটে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মানবেতর জীবন!

লালমনিরহাটে শারীরিক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধা মা মজিরন বেগম (৭০) ও ছয় বছরের ছেলে শাহীনকে নিয়ে পথে পথে ভিক্ষা করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আকতার হোসেনের কন্যা শেফালী বেগম (৩৪)। অভাব এত তীব্র যে একদিন শেফালী ভিক্ষা করতে না বের হলে, তাদের মা-মেয়ের ওষুধ ও খাওয়াদাওয়া বন্ধ থাকে। এই পরিবার যখন চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধার অন্য পরিবার সব ধরনের সুবিধা ভোগ করছে। বঞ্চনা ও দুরবস্থা থেকে প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগী পরিবার জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাট পৌরসভার বিডিআর হাট ও খোচাবাড়ি এলাকায় নামমাত্র ভাড়া ঘরে বসবাস করছেন মজিরন, শেফালী ও শিশু শাহীন বাবু। ঘরের মেঝেতে শুয়ে আছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী মজিরন বেগম। বৃদ্ধা একা উঠতে পারছেন না, তাই মেয়ে শেফালীকে সর্বদা তার সেবায় ব্যস্ত থাকতে হয়। ছয় বছরের শাহীন বাবু নানির হুইল চেয়ারের পাশে খেলতে খেলতে শৈশব কেটে যাচ্ছে, যা দেখে প্রতিবেশীরাও শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা হাসান আলীসহ অনেকে জানান, শেফালী মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়া সত্ত্বেও তার বাবা মো. আকতার হোসেনের অন্য সংসারের কারণে শেফালী ও তার মা বিচ্ছিন্ন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জনশ্রুতি রয়েছে, এক সময় শহরের নোয়াখালী মোড়ে বৃদ্ধা মজিরনের হোটেল ব্যবসা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এক ট্রেন দুর্ঘটনায় ডান পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করার পর পরিবারটির জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আকতার হোসেনের বাড়িতে গেলে তিনি জানান, শেফালীকে তিনি অবাধ্য বলে মনে করেন ও কন্যা হিসেবে মেনে নিলেও ২০১৯ সালে স্ত্রী মজিরনের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়েছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোনীতা দাস এনটিভি অনলাইনকে জানান, লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদ থেকে পরিবারটিকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হবে। অসুস্থ মজিরনের চিকিৎসার জন্য সাহায্যের আবেদন করা হলে বরাদ্দ আসার পর নিয়ম অনুযায়ী তা দেওয়া হবে।