আনারকলি চাষে যুবকের বাজিমাত

ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার পান্তাপাড়া ইউনিয়নের ঘুঘরি গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মাহমুদ হাসান স্ট্যালিন (৩৬) বিদেশি ফল আনারকলি বা প্যাসন ফ্রুট চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন। সাধারণত পার্বত্য অঞ্চলের পাহাড়ে এই ফল চাষ হলেও, স্ট্যালিনই প্রথম সমতলে বাণিজ্যিকভাবে এর আবাদ শুরু করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
মৃদু টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি বাংলাদেশে ট্যাং ফল নামেও পরিচিত। এর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা এবং ভালো বাজার মূল্য পাওয়ায় স্ট্যালিন লাভবান হচ্ছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আনারকলি ফল সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। এতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। ফলে উৎপাদন খরচ কম থাকে এবং ফলটি থাকে স্বাস্থ্যঝুঁকিমুক্ত। এটি ভিটামিন সি, আয়রন ও জিঙ্কে সমৃদ্ধ একটি স্বাস্থ্যকর ফল।
প্রায় ৬ থেকে ৭ বছর আগে স্ট্যালিন আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চমকপ্রদ ফল উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কৃষি কাজ শুরু করেন। প্রথম দিকে তিনি প্রায় ৬ বিঘা জমিতে ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারা ও আঙুর চাষ শুরু করেছিলেন। গণমাধ্যমের খবর দেখে তিনি প্যাসন ফ্রুট বা আনারকলি চাষে আগ্রহী হন। প্রথমে ২ শতাংশ জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ২০টি গাছ লাগিয়েছিলেন। বর্তমানে সেই সফলতা দেখে তিনি বাগানের পরিধি বাড়িয়ে আড়াই বিঘা জমিতে আনারকলি আবাদ করছেন।
গাছ লাগানোর মাত্র দুই বছর পরই স্ট্যালিনের বাগানে উচ্চ ফলন শুরু হয়। মাহমুদ হাসান স্ট্যালিন জানান, প্রথম ২ শতাংশ জমি থেকে প্রায় ১০ হাজার পিস আনারকলি ফলন পান। প্রতিটি ফল পাইকারি ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করে তিনি ওই সামান্য জমি থেকেই প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করেছেন। মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করে এই আয় হওয়ায় তিনি লাভের টাকা দিয়ে আড়াই বিঘা জমিতে আবাদ শুরু করেন।
স্ট্যালিনের মতে, বিঘাপ্রতি আনারকলি চাষে খরচ হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘা জমি থেকে বছরে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। এই ফল এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় ৮ মাস ধরে একাধারে পাওয়া যায়।
তরুণ এই উদ্যোক্তা জানান, যখন তিনি এই ফলের আবাদ শুরু করেন, তখন অনেকেই তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। কিন্তু এখন বাগানে ফলের প্রাচুর্য দেখে সমালোচকদের ভুল ভেঙেছে। মির্জাপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মানিক হোসেন মিয়াজি এবং বিল্লাল হোসেনের মতো অনেকেই বলছেন, স্ট্যালিনের বাগান দেখতে দূরদূরান্ত থেকে উদ্যোক্তারা আসছেন এবং ফলের স্বাদও অসাধারণ। ফলন দেখে তারা অবাক।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ঝিনাইদহের উর্বর মাটি নানা দেশি-বিদেশি ফল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত এবং তরুণরা অল্প বিনিয়োগে উন্নত পদ্ধতিতে কৃষি কাজে আত্মনিয়োগ করলে সফল হতে পারবে। স্ট্যালিন তার প্রথম লটের লাভের টাকা দিয়ে ড্রাগন, পেয়ারা ও মাল্টার বাগানও গড়ে তুলেছেন। তার এই নতুন বাগান থেকে খুব শিগগিরই ভালো ফলন শুরু হবে।