‘স্থলভাগের গ্যাসক্ষেত্র বিদেশি কোম্পানিকে দেওয়ার পাঁয়তারা’

দেশের স্থলভাগের গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানের কাজ বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে, যা জাতীয় স্বার্থবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা মনে করেন, তেল-গ্যাসক্ষেত্রে এমনটি হলে শুধু শুধুই দেশের সম্পদে বিদেশি কোম্পানিকে ভাগ দিতে হবে।
গতকাল রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সেমিনার হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় এ মন্তব্য করেন বক্তারা। তাঁরা দাবি করেন, গ্যাস উত্তোলন ও অনুসন্ধানে যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। কিন্তু বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের পর তাঁদের কাজের ক্ষেত্র কমিয়ে দেওয়া হয়।
তবে গত পাঁচ-ছয় বছরে অবস্থার চিত্র অনেকটাই পাল্টেছে। তাদের কাজ বেড়েছে। ফলে ধীরে ধীরে তারা স্বনির্ভর হয়ে উঠছে। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাপেক্স সফলতাও পেয়েছে। কিন্তু এতসবের পরও বাপেক্সকে পাশ কাটিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে স্থলভাগের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ ভূতত্ত্ববিদ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ‘স্থলভাগে জাতীয় কোম্পানির অনুসন্ধানে ও উত্তোলনে সফলতা রয়েছে বিধায় এখানে বিদেশি কোম্পানিকে নিয়োগ করে জাতীয় সম্পদ ভাগাভাগি করা জাতীয় স্বার্থবিরোধী। গ্যাস কার্যক্রমে বিদেশি কোম্পানির অংশীদারিত্ব গ্রহণ করলে দেশের গ্যাসসম্পদ ও তার সরবরাহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্তৃত্ব খর্ব হবে এবং বিদেশিদের কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পাবে। এটা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করবে।’
বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার পেছনে যে যুক্তি দেখানো হয়, তা মানার মতো না উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, পুঁজির অভাবের কথা বলে বিদেশি কোম্পানি আসার ফলে বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে গ্যাস কেনার জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে, তার ১০ ভাগের এক ভাগ দিলে জাতীয় প্রতিষ্ঠান জাতীয় সক্ষমতার মাধ্যমে ওই পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করতে পারত।
পাশাপাশি দেশের একটা প্রতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি হতো। যার মধ্য দিয়ে চিরস্থায়ী একটা ভূমিকা দেশের উন্নয়নে থাকতে পারত বলে মনে করেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামসুল আলম বলেন, ‘আমাদের কোম্পানিগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য ২০০৯ সাল থেকে এক হাজার কোটি টাকা করে দেওয়া হচ্ছে, যেটা বাংলাদেশের সব মানুষ বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে দিচ্ছে। সেই টাকা দিয়ে দেশীয় কোম্পানির জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা গ্রহণ করে তার কারিগরি ও বিনিয়োগ সক্ষমতা তৈরির কথা ছিল। কিন্তু সে কাজটি করা হচ্ছে না।
এসব পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়েই দেশের স্থলভাগের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের দায়িত্ব বিদেশি কোনো কোম্পানিকে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।