বরাদ্দ পান না সব দরিদ্র

সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ সব গরিবের কাছে যায় না। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বরাদ্দকৃত অর্থ যাতে যথাযথভাবে বণ্টন হয়, সেদিকেও নজর দিতে হবে। সদিচ্ছা ছাড়া দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
urgentPhoto
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার টুলটুলিপাড়ার হতদ্ররিদ্র শাহেদ আলী বাধর্ক্যের সঙ্গে লড়ছেন কয়েক বছর ধরে। যে বয়সে কাজ থেকে অবসর নেওয়ার কথা, সে বয়সে কাজ থেকে একটুও ফুরসত নেই তাঁর। অভাবের মধ্য দিয়ে অনেক কষ্টে কাটছে তাঁর জীবন।
শাহেদ আলী বলেন, ‘কাজ না করে উপায় নেই। খাওয়া তো লাগবে। সাত-আটজন মানুষকে খাওয়াতে হয়।’
বয়স্ক ভাতা পান কি না জিজ্ঞেস করলে শাহেদ আলী বলেন, ‘না না, বয়স্ক ভাতা কি আমারে দেই? টাকা লাগে না? দুই হাজার টাকা করে লাগে। মেম্বার-চেয়ারম্যান এই টাকা নেয়।’
এ রকম হতদরিদ্র আর পিছিয়ে পড়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। এ ধরনের নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্রের দায়িত্ব রয়েছে।
শেষ হতে যাওয়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ ছিল ৩০ হাজার কোটির টাকার কিছু বেশি। এ খাতের ১৪৪টি প্রকল্পের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনে। এর পর ওএমএস, ভিজিএফ, কাবিখা ও বয়স্ক ভাতা। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৩ ভাগ এ খাতে বরাদ্দের কথা। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘দেশের সব মানুষকে পেনশন ব্যবস্থার মধ্যে আনতে হবে। সরকারি পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিদের দ্বারা পেনশনের বরাদ্দটা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে না দেখানোই শ্রেয়। আপাত দৃষ্টিতে মোট বরাদ্দটাকে বড় করে দেখানো হয়। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এটা গরিব মানুষের কাছে যাচ্ছে না।’
উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে সীমিত সম্পদের মাঝেও সরকারের কিছু করার চেষ্টাও আছে। কিন্তু তা কি যথাযথভাবে বঞ্চিত মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে? আর গ্রামের মানুষ কিছু ভাতা পেলেও শহরে থাকা দরিদ্র মানুষগুলো তো তা থেকেও বঞ্চিত।
তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘বস্তিবাসী যারা ভাসমান আছে তাদের চিহ্নিত করে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া আমার মনে হয় না অন্য কোনো প্রক্রিয়া সফল হবে। যোগ্য লোকটাকে সেই প্রকল্পের মধ্যে আনতে হবে। দারিদ্র্যপ্রবণ এলকাতে এই ধরনের প্রকল্প অধিক মাত্রায় নিতে হবে।’
এ খাতে কোথায় কত বরাদ্দ হচ্ছে, আর কারা সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসছে, তা আগে থেকেই প্রকাশ করতে হবে- পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।