স্বাধীনতার পর সবচেয়ে কম উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের চিত্র স্বাধীনতার পর সবচেয়ে খারাপ ছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষার তথ্য অনুয়ায়ী, এই অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৪৭ শতাংশ।
এর পরের ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও এডিপি বাস্তবায়নের হার বেশ কম। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৬ শতাংশ। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এ সময় পর্যন্ত ৫৪ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০১২-১৩ অর্থবছর পর্যন্ত এডিপি আর এত কম বাস্তবায়িত হয়নি। ২০১২-১৩ সময় পর্যন্ত সবচেয়ে কম এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছিল ছিল ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে ৭৬ শতাংশ।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। তবে বাস্তবায়নে ধীরগতি ও অর্থসংকটের কারণ উল্লেখ করে এডিপি থেকে পাঁচ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা কেটে নেওয়া হয়। ফলে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার দাঁড়ায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা। তবে আসছে অর্থবছরের (২০১৫-১৬) জন্য আরো বেশি টাকার এডিপি থাকছে।
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা (অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়) অনুয়ায়ী, তাজউদ্দিন আহমেদ উপস্থাপিত ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছরে বাজেটে এডিপির আকার ছিল ৫২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭৬ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়িত হয়। এম সাইফুর রহমান উপস্থাপিত ১৯৮০-৮১ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ এডিপির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা, যার শতভাগ বাস্তবায়িত হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থাপিত ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে এডিপির জন্য বরাদ্দ ছিল ৫২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা, যা ৯৬ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ৬০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৪৭ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত কোনো মাসেই ১০ শতাংশের বেশি বরাদ্দের ব্যয় হয়নি। তবে ওই অর্থবছরের মে মাসে ১২ শতাংশ ও জুনে ২৮ শতাংশ ব্যয় দেখানো হয়েছে।
অন্যদিকে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত পাওয়া চিত্রে দেখা যায়, এই ছয় মাসে মোট ২৮ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে জুলাইয়ে ২ শতাংশ, আগস্টে ২ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৫ শতাংশ, অক্টোবরে ৪ শতাংশ, নভেম্বরে ৭ শতাংশ ও ডিসেম্বরে ৮ শতাংশ বরাদ্দ ব্যয় দেখানো হয়েছে। তবে পরবর্তী ছয় মাসের চিত্র সেখানে উল্লেখ নেই।
আইএমইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মোট প্রকল্প ছিল এক হাজার ৪৫৩টি। এর মধ্যে মূল প্রকল্প এক হাজার ৩৫১টি, থোক ৯টি ও উপপ্রকল্প ৯৩টি। কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগই গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত শতভাগ প্রকল্প বরাদ্দ ব্যয় করতে পারেনি। এ সময়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ১৫টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল তিন হাজার ৭৭০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৯৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। আর বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে ৪০ শতাংশের নিচে ব্যয় করেছে ৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ।