এনবিআরের সব দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি ঘোষণা
আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, ওষুধসহ জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের আমদানি-রপ্তানি ছাড়া আগামীকাল সোমবার (২৬ মে) থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার (২৫মে) রাজধানীর এনবিআর প্রধান কার্যালয়ে নীচে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলনে এমন কর্মসূচি ঘোষণা এসেছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা, উপ কমিশনার আব্দুল কাইয়ুম এবং উপ কর কমিশনার মিজ রইসুন নেসা।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে আমাদের মূল চারটি দাবী পুরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করার জন্য আমরা সরকারকে সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আমাদের কর্মসূচির ফলে সম্মানিত করদাতা ও সেবাপ্রার্থীগণের সাময়িক অসুবিধার জন্য এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ মনে করে তাঁদের এই সাময়িক ত্যাগ দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে ও রাজস্ব ব্যবস্থার টেকসই সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। রাজস্ব ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী সংস্কারের ক্ষেত্রে আমাদের এই যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার কী কারণে, কার প্রভাবে বা কোন অজুহাতে এখনো বাস্তবায়ন করছে না, তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। যেহেতু আমাদের উপর্যুক্ত চারটি সুনির্দিষ্ট দাবী পূরণের বিষয়ে সরকারের পক্ষ হতে অদ্যাবধি সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করা হয়নি, সেহেতু আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে; অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে; রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে; এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, আমরা শুরু থেকেই আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সাথে সংগতি রেখে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি শক্তিশালী, স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত রাজস্ব এজেন্সি হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে পুনর্গঠনের দাবি জানিয়ে আসছি। সেই সাথে সরকারের রাজস্ব নীতি পৃথকীকরণের পরিকল্পনার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আমরা জানাতে চাই, রাজস্ব আহরণের মতো একটি জটিল ও বিশেষায়িত ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নের জন্য কর, কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের পেশাগত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়ে এবং সকল অংশীজনের মতামতকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি স্বতন্ত্র ও বিশেষায়িত রাজস্ব নীতি প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য আমরা দাবি করে আসছি। অধ্যাদেশে জারিকৃত রাজস্ব মডেলের অকার্যকারিতার বিষয়ে সিভিল সোসাইটি সহ সমাজের অন্যান্য অংশীজনও আশংকাও প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করছি, সরকার এ অধ্যাদেশ বাতিল করে সমাজের অংশীজনদের বিশেষজ্ঞ মতামত ও আমাদের অভিজ্ঞতালব্ধ পর্যবেক্ষণকে পুনর্বিবেচনা করবে।
অত্যন্ত দুঃখের সাথে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, রাজস্ব সংস্কারের খসড়া প্রস্তুতির প্রক্রিয়ার শুরু থেকে প্রতিটি ধাপে এনবিআরের চেয়ারম্যান মহোদয় চরম অসহযোগিতা করে আসছেন এবং সরকারকে ভবিষ্যৎ রাজস্ব কাঠামো নিয়ে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষার কথা জানানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সুবিধাভোগী প্রশাসনের এই কর্মকর্তা তাঁর পূর্ববর্তী পদে থাকা অবস্থায় ব্যাংকিং খাতে বিশৃংখলা সৃষ্টিসহ জুলাই পরবর্তী সময়ে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে কর ফাঁকি বিষয়ে সহযোগিতা করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ অডিট কার্যক্রম বন্ধ করেন। এছাড়া কিছুদিন আগে অযৌক্তিক এবং অপরিকল্পিতভাবে ভ্যাট হার বৃদ্ধির মাধ্যমে তিনি দেশের অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি করেন। বর্তমানে বিভিন্ন উপায়ে তিনি সরকারের সাথে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের গঠনমূলক ও সার্থক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চরূপে অসহযোগিতা চালিয়ে যাচ্ছেন।