বার কাউন্সিলের পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা অমান্য করে ভর্তি-বাণিজ্য, গাফিলতি ও খামখেয়ালিপনায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছেন না ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার শিক্ষার্থী। এলএলবিতে অনার্স করেও আইনজীবী পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থী।
আজ রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে আইন, বিচার ও সংবিধানবিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রছাত্রীরা বলেন, ‘বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-বাণিজ্য, গাফিলতি ও খামখেয়ালির কারণে আমরা প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী আমাদের স্বপ্ন পূরণের পরীক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছি।’
শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক পাসের পর আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রত্যেক আইন শিক্ষার্থীই আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকে। শিক্ষার্থীর স্বপ্নের সঙ্গে তাঁর পরিবারের স্বপ্নও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
আইনে স্নাতক করার পর আইনজীবী হিসেবে মামলা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনুমোদন তথা একটি সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। তবে এর আগে কমপক্ষে ছয় মাস সময় সিনিয়র কোনো অ্যাডভোকেটের অধীনে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করতে হয়।
আসন্ন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তি (এনরোলমেন্ট) পরীক্ষা আগামী ২২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সেখানে ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি-বাণিজ্য, গাফিলতি ও খামখেয়ালির কারণে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী স্বপ্ন পূরণের পরীক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে আইনজীবীদের রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ ‘বাংলাদেশ বার কাউন্সিল’ তাদের এক নোটিশের মাধ্যমে জানিয়েছে, ইউজিসির আদেশের আলোকে ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিলের পরবর্তী সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতি সেমিস্টারে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু তারপরও যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির আদেশ ভঙ্গ করে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে, সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বার কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত আইনজীবীর তালিকাভুক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বার কাউন্সিলের এ রকম সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পৃথক রিট করেন। ওই সব রিট মামলা দায়েরের পর হাইকোর্ট রিটকারী শিক্ষার্থীদের আসন্ন আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য বার কাউন্সিলের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ প্রদান করেন। তবে পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে বার কাউন্সিল আপিল করলে চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্ট বিভাগের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ স্থগিত করে আপিল বিভাগের নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামীকাল ১৪ অক্টোবর দিন নির্ধারণ করেন।
‘আমরা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পাসের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে এসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হই। তবে আইনে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও একজন শিক্ষার্থীর কাছে প্রথমদিকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বা ইউজিসি, হাইকোর্ট বিভাগ, আপিল বিভাগ কী—তা না জানাই স্বাভাবিক ছিল। অথচ আমাদের সেই স্বভাবসুলভ অজানাকে পুঁজি করে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের খেয়ালখুশিমতো ভর্তি-বাণিজ্য করেছে, যা সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সবকিছু জানার কথা নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় আমাদের অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসি কর্তৃক অনুমোদিত কি না, শুধু সে বিষয়টিতেই খেয়াল রেখেছে।’
‘কিন্তু ২০১৪ সালে ইউজিসি একটি চিঠি দিয়েছিল যে ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি করা যাবে না। সে চিঠির আলোচনা-নির্দেশনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় এ সম্পর্কে আমাদের জানা কি আদৌ সম্ভব ছিল না।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তবে শুধু ইউজিসি নয়, পরে আমরা স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভর্তি-সংক্রান্ত একটি রায় প্রদান করেন। সেই রায়ের বাস্তবায়নের দিকটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর জারি হয়।’
শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘অথচ উদ্বেগ আর আমাদের স্বপ্নভঙ্গের বিষয় হলো, ২০১৪ সালে আমরা ভর্তি হওয়ার পর সবকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় যাদের আইন বিভাগ রয়েছে, তারা প্রত্যেক সেমিস্টারে তাদের ভর্তিকৃত আইন শিক্ষার্থীদেন ভর্তি তালিকা নাম এবং আইডিসহ বার কাউন্সিলে প্রেরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৪ সালে ইউজিসির তৎকালীন আদেশ অমান্য করে ১২০ শিক্ষার্থীর তালিকা বার কাউন্সিলে প্রেরণ করে; কিন্তু বার কাউন্সিল ওই তালিকা ৫০ জনের অধিক হওয়া সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে কোনো সতর্কীকরণ নোটিশ পাঠায়নি। অথচ তারা যদি সেদিন নোটিশ পাঠাত, তাহলে হয়তো আমাদের ভুক্তভোগী হতে হতো না। আর শিক্ষার্থীরাও তখন আইনজীবী হওয়ার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে অন্য কোনো বিষয়ে পড়তে পারত।’