বছর পেরিয়ে গেলেও জাবির আবাসিক হল ছাড়েনি অছাত্ররা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অবৈধভাবে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার এক বছর পার হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সরেজমিনে দেখা গেছে এখনও আবাসিক হল ছাড়েননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করা অছাত্ররা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ৪৭ ব্যাচের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শেষ ও ৪৮ ব্যাচের কয়েকটি বিভাগে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শুরু হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাগ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও ৪৩তম ব্যাচ থেকে ৪৬তম ব্যাচের অনেক শিক্ষার্থী এখনও হলে অবস্থান করছেন। নোটিশ জারি করার পরও হল ছাড়েনি মেয়াদ পার করা শিক্ষার্থীরা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর হলগুলোতে মেয়াদ পার হওয়া শিক্ষার্থীদের পাওয়া না গেলেও ধীরে ধীরে হলে ফিরতে শুরু করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আগামী মে মাসের ২৫ তারিখেই মধ্যেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন সম্পন্ন করতে বদ্ধ পরিকর। নিয়ম অনুযায়ী তার ২১ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করতে হয়। শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, সুস্থ নির্বাচনি পরিবেশ বজায় রাখতে হলগুলোকে অছাত্রমুক্ত করা জরুরি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদ মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করতে কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়নি। অছাত্ররা হলে থেকে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার পরিবেশ ও জাকসুর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, অবৈধ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিতে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। প্রশাসন ইদের আগেই অছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়ে রুমে রুমে নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু এটি আমাদের কাছে পর্যাপ্ত মনে হয়নি।
জাবির অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, আমরা ঈদের পরই অছাত্রদের ক্যাম্পাস ত্যাগের ব্যবস্থা নেব। আজকেই একটি নোটিশ জারি করা হবে। এরপরও কোনো শিক্ষার্থী যদি পরীক্ষা শেষ করেও ক্যাম্পাসে অবস্থান করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি ও ফজিলাতুন্নেছা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, যেসব শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, তাদের হল ছাড়তে আমরা একাধিকবার নির্দেশ দিয়েছি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী সেটি মানেননি। আমরা শেষবারের মতো তাদের ঈদের ছুটি অর্থাৎ ২০ তারিখের আগেই হল ছাড়তে নির্দেশ দিয়েছি। ঈদের পর মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো শিক্ষার্থীকে হলে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না।
জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, আমরা শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিতের বিষয়ে সবসময়ই সচেতন। আমরা অফিস আদেশ জারি করার মাধ্যমে দ্রুতই মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দিব। ঈদের পর নিয়মিত শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষার্থী আর হলে থাকতে পারবে না। যদি কোনো মেয়াদ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীকে হলে পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতবছরের ২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে জাবিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ছাত্র কর্তৃক নারীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের এক জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে অবৈধভাবে অবস্থানরত অছাত্রদের পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।