বরখাস্ত শিক্ষককে পুনর্বহালের দাবিতে ভিকারুননিসার বসুন্ধরা শাখায় বিক্ষোভ

হিজাব পরতে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করার জেরে বিক্ষোভ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখার সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। তারা বরখাস্ত শিক্ষক ফজিলাতুন নাহারকে পুনর্বহাল, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপপ্রচারকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
আজ বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশের সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এর আগে মঙ্গলবার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগমের সই করা এক নোটিশে ছাত্রীদের ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে ওই শিক্ষককে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
আন্দোলনরত নবম শ্রেণির ছাত্রী রোকাইয়া বিনতে মাজহার বলেন, ‘আমাদের আপা হিজাব পরতে নিষেধ করেননি, তিনি সঠিকভাবে হিজাব পরতে বলেছিলেন। প্যানেল শিক্ষার্থীরা যারা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছিলেন, তারা শেষ পিরিয়ডে ওই ক্লাসে গেলে আপা তাদের বলেছিলেন বাইরে গিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে। প্যানেল শিক্ষার্থীরা ড্রেসকোড না মানা ছাত্রীদের বাইরে নিয়ে ৮-১০ মিনিট কথা বলেন।’
‘এই ১০ মিনিটের জন্য আমাদের শিক্ষকের নামে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আমরা আপার পুনর্বহাল এবং অপপ্রচারকারীদের শাস্তি চাই’, যোগ করেন রোকাইয়া বিনতে মাজহার।
আন্দোলনরত দশম শ্রেণির ছাত্রী মেহের আফরোজ কনক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। তিনি ছাত্রীদের ড্রেসকোড মানতে বলেছিলেন। তাই তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।’
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ছাত্রী আনিসা করিম বলেন, ‘আমি ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি। শুধু নাহার আপা নয়, অন্যান্য শিক্ষকরাও কখনো আমাদের হিজাব নিয়ে কোনো কথা বলেননি। আমার বিশ্বাস আপার বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো করা হচ্ছে, সেগুলো ভিত্তিহীন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যেসব গণমাধ্যমসহ যারা আপার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ছড়িয়ে তার মানহানি করার চেষ্টা করছেন, তাদের বিচার চাই।’
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা প্রভাতি শাখার ষষ্ঠ শ্রেণির একটি শ্রেণিকক্ষ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এবং অ্যাডহক কমিটির (অস্থায়ী কমিটি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
ওই শিক্ষককে চাকরি থেকে কেন স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে না, তার কারণ সাত কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতেও বলা হয় নোটিশে। অভিযুক্ত শিক্ষক তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক ফজিলাতুন নাহার বলেন, ‘আমি এই কাজটাই করিনি। আর এই ক্লাসে ২২ জন মেয়ে হিজাব পরে না। নয়জন বা ১১ জন পরে। আমি মেয়েদের বলেছি, তোমরা হিজাব পরে স্কুলে আসবে। হিজাব কীভাবে পরতে হবে তার নিয়মও ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেছিলাম।’
দেড় দশকের বেশি সময় ধরে প্রতিষ্ঠানটির বসুন্ধরা শাখায় কর্মরত ওই শিক্ষক সেদিনের ঘটনার প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যখন ক্লাসে গেলাম, গিয়ে দেখি ভলান্টিয়াররা বাচ্চাদের চেক করছে—পোশাক ঠিক আছে কি না, নখ বড় কি না, চুল বাঁধা ঠিক আছে কি না।’
‘তখন আমি ওদের (ভলান্টিয়ারদের) বললাম, তোমরা সারাদিন কী করলে? বলে, আপা আমরা সময় পাইনি। তখন বললাম, তাই বলে লাস্ট পিরিয়ডে চেক করবে? তা ঠিক আছে, যাও, তোমাদের যা যা কাজ তোমরা বাইরে নিয়ে যাও এদের, বাইরে নিয়ে তোমাদের দায়িত্ব পালন করো। এটা বলেছি, মেয়েদের বেরও করিনি’, যোগ করেন শিক্ষক ফজিলাতুন নাহার।
সাময়িক বরখাস্ত করার আগে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি দাবি করে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমি আইনি পদক্ষেপ নেব।’
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাজেদা বেগম বুধবার দুপুরে বলেন, ‘অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আমরা একটি তদন্ত পরিচালনা করছি। আমাদের বিশ্বাস, তদন্তে সত্য ঘটনা উঠে আসবে। সে অনুসারে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাব।’