বিড়ালের বদৌলতে বাওয়েনের ভাগ্য বদল
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/07/06/photo-1436185620.jpg)
কার যে কিসে ভাগ্য খোলে, তার তো আর ঠিক নেই। ঘরহীন অসহায় জেমস বাওয়েনের ভাগ্য খুলেছে এক বিড়ালের সান্নিধ্যে এসে। সেই বিড়ালেরও ভাগ্য খুলেছে বলা যায়। বিড়ালটির নাম বব। জেমস আর ববের বিচিত্র বন্ধুত্ব যেন গল্পকেও হার মানায়।
জেমস বাওয়েন ছিলেন এক ঘরছাড়া মানুষ। গান-বাজনা করে বেড়াতেন পথেঘাটে। এক সময় মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, সেই আসক্তি থেকে মুক্তি পেলেও জীবনধারণের জন্য কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। রাস্তায় গান গাইতেন, মানুষজন দয়া করে যা দিত তা দিয়েই খেয়ে-পরে দিন কাটাতেন কোনোমতে। এভাবেই চলছিল, একদিন সবকিছুই বদলে গেল। সেদিন থেকে, যেদিন তার ববের সাথে দেখা হয়েছিল।
সেই দিনের ঘটনা ছিল এমন, সাবওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় বাওয়েন দেখতে পেলেন একটি অসহায় বিড়াল। বাদামি রঙের বিড়ালটি পায়ে ব্যথা নিয়ে পড়ে আছে, চলতে পারছে না। জখম পা দেখে বাওয়েন সেটিকে তুলে নিয়ে গেলেন এক পশু চিকিৎসকের কাছে। ঠিকমতো চিকিৎসা আর সেবা পেয়ে সেরে উঠল বিড়ালটি।
এরপর আর কি করা, বিদায় দেওয়ার সময়। কারণ বাওয়েনের নিজেরই খাওয়া বা থাকার ঠিক নেই, আস্ত একটি বিড়াল পালবেন কী করে! তদ্দিনে অবশ্য বাওয়েনের বড় মায়া পড়ে গেছে বিড়ালটির ওপর। তিনি অবাক হয়ে খেয়াল করলেন, বিড়ালটি তার সাথে ন্যাওটার মতো লেগে থাকছে। তিনি যেখানেই যান, সেখানেই তার সাথে চলে আসছে। কোনো অবস্থাতেই ছেড়ে চলে যাচ্ছে না। খাবার পাক, কি না পাক, বাওয়েনের সাথেই সে থাকছে সবসময়। সার্বক্ষণিক সঙ্গী যেহেতু একটা নাম তো দিতেই হয়- তখন থেকে বিড়ালের নাম হলো বব। এরপর বিড়ালকে পাশে নিয়েই রাস্তায় গিটার বাজিয়ে গান-বাজনা করেন বাওয়েন। সমঝদার সঙ্গীতজ্ঞের মতো পাশে বসে থাকে বব।
এরপর থেকেই দৃশ্যপট পাল্টাতে লাগল। দেখা গেল, ববকে পাশে নিয়ে বসে থাকা বাওয়েনের সঙ্গীতে রীতিমতো মুগ্ধ সবাই। যেই গান শোনে বা পাশ দিয়ে যায়, বেশ খানিকটা অর্থকড়ি মেলে দুজনের। কামাই-রোজগার এমনই বাড়ল যে রীতিমতো স্বচ্ছল হয়ে উঠতে লাগলেন বাওয়েন।
গল্পের চমক আরো বাকি। ববকে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো জীবন নিয়ে ফাঁকতালে আস্ত একটা বই লিখে ফেললেন বাওয়েন। বইয়ের নাম ‘এ স্ট্রিট ক্যাট নেইমড বব’। ২০১২ সালে প্রকাশিত এই বইটি নিউইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলারের তালিকায় এসে পড়ে প্রায় সাথে সাথেই। ববের দেখা পেতে, তার জন্য উপহার নিয়ে আসতে আর তার ছবি তুলতে রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে পড়েন অজস্র মানুষ।
এখন সবার কাছেই দারুণ প্রিয় বব। বাওয়েন এখনো ববকে ঘাড়ে নিয়ে গিটার বাজিয়ে গান শোনান পথে-ঘাটে। হাত মেলাতে বেশ ওস্তাদ বব। হাত মেলানো না বলে অবশ্য ওটাকে ‘হাই ফাইভ’ বলাই ভালো। কারণ হাত মেলানোর ভঙ্গিটি ববের ওরকমই। বহুদূর থেকে এখন মানুষ আসে শুধু ববের সাথে ‘হাই ফাইভ’ করবে বলে। রীতিমতো সেলিব্রিটি সে, আর তার ‘বন্ধু’ বাওয়েন তো বটেই!
গল্পের শেষ চমকটুকু জেনে রাখুন। এরই মধ্যে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হচ্ছে ববকে নিয়ে। ‘এ স্ট্রিট ক্যাট নেইমড বব’-এর কাহিনী অনুযায়ীই এগোবে এই ছবির গল্প। এ ছাড়া ববকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বহু প্রামাণ্যচিত্র। তারই একটি থাকছে পাঠকের জন্য।