ব্র্যান্ডের ঘড়ির কদর আছে, ক্রেতা নেই

বেজায় বেকায়দায় আছে সুইজারল্যান্ডের শতাব্দীপ্রাচীন ঘড়িশিল্প। নতুন বছর দরজায় কড়া নাড়লেও আশাবাদী হতে পারছে না কোনো ব্র্যান্ড। এমনকি ২০১৩ সাল থেকে শুরু হওয়া ভাটার টান এখনো অব্যাহত রয়েছে। ২০১৬ সালেও পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনো সম্ভাবনা দেখছে না সুইজারল্যান্ডের শীর্ষ কোম্পানিগুলো।
অথচ এখনো পৃথিবীব্যাপী সুইস ঘড়ির কদর সবচেয়ে বেশি। নামী ও দামি ঘড়ি মানেই সুইস ঘড়ি। এদের ঘড়ি তৈরির ঐতিহ্য ও ইতিহাস কয়েক শতকের। তা সত্ত্বেও তাদের বিপ্রতীপ স্রোতে সাঁতার কাটতে হচ্ছে। এর সঙ্গে ২০১৫ সালে যোগ হয়েছে চীনের মন্দা। পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির স্মার্টওয়াচের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা কিছুটা অসহায়। সঙ্গে খাঁড়ার ঘা হয়েছে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলা। এ জন্য বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘড়ি প্রস্তুতকারক দেশ সুইজারল্যান্ড আগামী বছর বড়জোর ২ শতাংশ বিক্রি বৃদ্ধি আশা করছে। আগের তিন বছরেও পরিস্থিতি অভিন্ন ছিল। অতএব, উৎপাদন নয়, প্রতিটি বড় কোম্পানি ক্রেতা বাড়াতেই মনোযোগী। সেই মতো স্ট্র্যাটেজি নির্ধারণ করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ একটা সময় ছিল, যখন বছরে তাদের ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। সেই দিন এখন যেন ইতিহাস।
বিখ্যাত ব্র্যান্ড কার্টিয়েরের উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রিচমন্ট বাজারের ট্রেন্ড অনুধাবন করে আগেভাগেই তাদের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে ফেলেছে। হাতঘড়ির একটি পরিচিত মনডেইন, এর কর্মকর্তারা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী আসলে সার্বিক বৈশ্বিক পরিস্থিতি। আমেরিকা, ইউরোপ, চীন—সংকট সর্বত্র।
পারমিজিয়ানি আর উলিসের মতো ছোট কোম্পানি এরই মধ্যে লোক ছাঁটাই করেছে। অন্যদিকে বছরে ৯০ হাজার ঘড়ি প্রস্তুতকারক মরিস লাক্রো ক্রেতা খুঁজছে ব্র্যান্ডটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আবার এই মন্দার বাজারেই ওমেগার উৎপাদক সোয়াচ টার্গেট করছে তুলনায় তরুণ ক্রেতা। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে ট্যাগ হিউয়ার তৈরি করেছে নতুন স্মার্টওয়াচ।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে শক্তিশালী ব্র্যান্ডগুলোই টিকে যাবে। অনেক ব্র্যান্ডের হাতবদলের সম্ভাবনাকেও তারা উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই শতকের শুরুতে বিশ্বব্যাপী ঘড়ির চাহিদা বাড়তে বাড়তে একসময় দ্বিগুণ হয়। এর কারণ ছিল চৈনিক ভোক্তা বৃদ্ধি। কিন্তু সেই জোয়ারে হঠাৎ টান লক্ষ করা যাচ্ছে। সে দেশের জিডিপি গত ছয় বছরের মধ্যে এবার সবচেয়ে কম। তাদের ইন্ডাস্ট্রি এখন পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের রপ্তানিও কমেছে।
ওমেগা ছাড়াও টিস ও লনজিন্সের উৎপাদক সোয়াচের কাছে গত জুনের শেষে ছিল এক হাজার ২০০ কোটি ডলার। আর রিচমন্টের কাছে ছিল পাঁচ হাজার ২০০ কোটি ডলার। এসব প্রতিষ্ঠানও ভাবছে বিক্রির নতুন উপায় খুঁজে বের করার বিষয়ে। অবশ্যই লক্ষ্য নতুন বাজার।
পরোক্ষে, সুইস ফ্রাঁর দুর্গতি অনেক প্রতিষ্ঠানকেই বাধ্য করেছে রপ্তানি বাজারের জন্য মূল্যহ্রাসের। এর সমান্তরালে অ্যাপেলের স্মার্টওয়াচও বাজারে বেশ প্রভাব ফেলেছে। এদের সঙ্গে পাল্লা দিতেই ওমেগা দুটো নতুন জেমস বন্ড থিমের ঘড়ি লাইন বাজারে এনেছে। উদ্দেশ্য, তরুণদের আকৃষ্ট করা।
এদিকে, বাজার বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আবার এখনই হতাশ হওয়ার পক্ষে নন। তাঁদের ভাষ্য, এই অধোগতি সাময়িক। কিছুটা সময় দিলে বাজার আবারো চাঙ্গা হবে। তাসের ভরসা ঘুরেফিরে সেই আমেরিকা আর চীনের নব্য ধনীরা। আপাতত ২০১৬ সালে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতেই তাই সন্তুষ্ট থাকাটা বাস্তবানুগ হবে বলেই তাঁদের অভিমত। অবশ্য তাঁরা এটাও বলেছেন, সেই আগের দিন হয়তো ফিরবে না। হবে না ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। তবে বাতাস ঘুরবেই।