বাণিজ্যমেলা
প্রসাধনী ও গয়নায় বিশেষ ছাড়

বাণিজ্যমেলা ঘিরে চলছে শেষ সময়ের বেচাকেনা। তাই লাভের বিষয়টি থেকেও বিক্রেতারা মনোযোগী হচ্ছেন পণ্য বিক্রিতে। সীমিত লাভ রেখেই যেসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে, তার মধ্যে অন্যতম গয়না ও প্রসাধনী। ক্রেতারাও খুশি সাধ্যের মধ্যে এসব পণ্য পেয়ে।
মিরপুর শেওড়াপাড়া থেকে মেলায় আসা শামছুন্নাহার বলেন, ‘নিজের জন্য কিছু গয়না কিনতেই এসেছিলাম, এখানে অনেক কম দামে পেয়ে যাচ্ছি। বলতে গেলে দুটির দামে তিনটি। তাই এ সুযোগে আত্মীয়দের জন্যও কিছু গয়না কিনেছি।’
অন্যদিকে, মিরপুর-১ থেকে এসেছেন ডা. ফারজানা। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে একটি গয়না পছন্দ করে গিয়েছিলাম। টাকার স্বল্পতার কারণে তখন কিনতে পারিনি। আজ কিনতে এসে দেখি, সেই পণ্যটিই আগের তুলনায় তিনশ টাকা কমে পাচ্ছি।’ শেষ সময়ে কেনাকাটা করতে এসে অনেকেই এমন সন্তুষ্টির কথাই জানিয়েছেন।
হারবাল ও বিদেশি প্রসাধনীর স্টলে নারীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, প্রসাধনী ও গয়নার পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য বেচাকেনাও জমে উঠেছে। শেষ দিকে প্রায় সব স্টলেই বেশি ছাড় দেওয়ার প্রবণতার কারণে কেনাকাটা বাড়ছে। পছন্দের পণ্য কিনে স্টল ছাড়ছেন অনেকেই।
হেভেন হারবালের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, এক বিক্রেতা একটি হেয়ার ট্রিটমেন্টের গুণাবলি তুলে ধরছেন ক্রেতার কাছে। বিক্রেতা জানালেন, ভেষজ উপাদানে তৈরি এ ট্রিটমেন্ট চুলের স্বাভাবিক সৌন্দর্য ও সুনিদ্রা নিশ্চিত করে। চুলে আলাদা কালার দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মেলায় দেড় হাজার টাকার এ ট্রিটমেন্ট বড় ধরনের ছাড়ে এক হাজার ৩০০ টাকায় দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা। বিভিন্ন পণ্যে চলছে একটি কিনলে একটি ফ্রি অফার। কিছু পণ্য ১০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান ওই বিক্রেতা।
র্যাংগস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান হোসাইন ট্রেডিং কোম্পানি (এইচটিএল) আমদানি করা প্রসাধনী পণ্য নিয়ে এসেছে। তারাও ১০ শতাংশ ছাড়ে পণ্য বিক্রি করছে।
তুরস্কভিত্তিক ব্র্যান্ড গোল্ডেন রোজের প্রসাধনী মেলায় নিয়ে এসেছে সেলিম ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। তারাও বিভিন্ন পণ্য ছাড়ে বিক্রি করছে। প্রসাধনীর পাশাপাশি বেচাকেনা বেড়েছে অলংকার সামগ্রীর। ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ইরানসহ বিভিন্ন দেশের স্টলগুলোতে জুয়েলারির প্রতি ক্রেতার ঝোঁক ছিল বেশি।
তবে পিছিয়ে নেই দেশি উদ্যোক্তারাও। স্থানীয় হস্তশিল্পীদের তৈরি নতুন গয়না বেশ বেচাকেনা হচ্ছে। দেশি প্রতিষ্ঠান ঝুমকা ফ্যাশন ও জুয়েলারির বিক্রেতা মো. মহসিন বলেন, ‘মেলার প্রথম দিকে যে দামে বিক্রি হয়েছে, এখন তার চেয়ে একশ থেকে দেড়শ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে পণ্য। কম দামে বিক্রির কারণে ক্রেতাদের আগ্রহ বেড়েছে।’
এ ছাড়া ব্রেসলেট, চুড়ি, রিং, দুল, লকেট, পায়েল, পাঞ্জা, টিকলি, টায়রা প্রভৃতি গয়না এবং এসব গয়নার সঙ্গে মিলিয়ে আইপেনসিল, লাইনার, আইশ্যাডো, ফেসপাউডার, শাইনার, ফাউন্ডেশন, মাশকারা ও নেইলপলিশসহ বিভিন্ন প্রসাধনী রয়েছে।
গয়নার মধ্যে পার্ল, স্টোন ও গোল্ড প্রলেপের ব্যবহার লক্ষণীয়। তা ছাড়া পুঁতি, গ্লিটার, জরি, সিলভার, কপার, সুতা এবং কোনোটাতে ক্রিস্টালের ব্যবহারও দেখা গেছে।
কোরিয়ান, চায়নিজ, জাপানিজসহ বিভিন্ন দেশের ফ্যাশনেবল গয়না সহজেই আকৃষ্ট করেছে ক্রেতাদের। আর এসব গয়না স্টলভেদে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি হচ্ছে। প্রসাধনীর মধ্যে ল্যাকমি, ম্যাক, জর্ডানসহ নামীদামি ব্র্যান্ডের পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে মেলায়।
লিকুইড বা স্প্রেজাতীয় ফাউন্ডেশন, ফেসপাউডার ও শাইনারও রয়েছে। চুড়ি আর দৃষ্টিনন্দন ইমিটেশন গয়না মন কেড়ে নিচ্ছে প্রতিদিন মেলায় আসা নারী ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের। বিশেষ করে পাকিস্তানি প্যাভিলিয়নে এবারও ‘তুফান’ চুড়ি একরকম ঝড় তুলেছে তরুণীদের মধ্যে।
এ ছাড়া মার্বেল, বাঁকা মার্বেল, মাহা, প্রিন্স, হোয়াইট মানি, বোরাক, বুহা পুকারড নামে বিভিন্ন চুড়ি পাওয়া যাচ্ছে পাকিস্তানি প্যাভিলিয়নে। দাম ১৫০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত।
প্রতি ডজন চুড়ি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকায়। কাচের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইনের চুড়িও পাওয়া যাচ্ছে এখানে। থাইল্যান্ড থেকে আনা জুয়েলারির দাম রাখা হচ্ছে ১৫০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে। ব্যাগ ৩০০ থেকে তিন হাজার টাকা, ঘড়ি ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা এবং জুতা ৫০০ থেকে তিন হাজার টাকা।