নিজের ডিজাইনে ঈদের পোশাক

ছবি : রাকিবুল হক
ঈদের পোশাকে একটু ভিন্নতা আনতে কে না চায়? এ ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের জুড়ি নেই। আর নিজের ডিজাইনে পোশাক তৈরিতে একমাত্র ভরসা দর্জি। তবে রমজানের শুরু থেকেই ব্যস্ত হয়ে ওঠে দর্জি পল্লী। অন্যদিকে রোজা শুরুর কিছুদিন পরই অধিকাংশ টেইলার্সে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় নো-এন্ট্রি। তাই মনের মতো ঈদের পোশাক তৈরি করতে এখনই নিজের পছন্দসই কাপড় কিনে ঢুঁ দিতে পারেন দর্জি বাড়িতে।
এখন যেহেতু গরম, তাই আরামদায়ক কাপড় দেখে কিনুন।
বর্তমানে ট্রেন্ড চলছে একটু গর্জিয়াস ঘরানার। ক্রস, লেইস, ডলার, স্টোনের ব্যবহারের পাশাপাশি পাতলা আরামদায়ক সুতি কাপড়ের ওপরও রয়েছে নানা ভ্যারিয়েশন। বাজার ঘুরে দেখা যায়, নতুন কাপড়ের মধ্যে রয়েছে সিকোয়েন্স, ডিজিটাল, জুমার, লামলাম কটন, লেদার প্রিন্টসহ নানা ধরনের কাপড়। এর মধ্যে সিকোয়েন্স কাপড় বেশ গর্জিয়াস। ইন্ডিয়ান কটন রয়েছে কয়েক ধরনের। ইন্ডিয়ান কটনগুলোর পাড়ে চওড়া অ্যাম্ব্রয়ডারি ও হাতের কাজ করা। ভেলভেট কাপড়ে জর্জেটের ওপর নকশা করা হয়েছে ভেলভেট দিয়ে। কটনের মধ্যে রয়েছে চোখধাঁধানো নানা ডিজাইন। নতুন আসা লেদার প্রিন্ট খুব আরামদায়ক। নেট কাপড়ের ওপর লেদারের ফুলের মতো বসানো কাপড় জুড়ে। এ ছাড়া বোম্বে টিস্যু, কটন নেট, লেস চিকেন, ইন্ডিয়ান নেট, ক্রস নেটসহ নানা ধরনের কাপড় বেছে নিতে পারেন আপনার ঈদের পোশাকটির জন্য।
চাঁদনীচকে পেয়ে যাবেন অনেক দর্জি দোকান। এখান থেকেই আপনার পছন্দ মতোই পোশাক বানিয়ে নিতে পারবেন। দোকান ঘুরে দেখা গেল সুতি থ্রি-পিসের জন্য নেওয়া হচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকা। সিল্ক, জর্জেট, কাতান ও বেনারসি কাপড়ের মজুরি একটু বেশি। এসব কাপড়ের এক সেট থ্রি-পিস বানাতে মজুরি লাগছে ৬০০-১০০০ টাকা।
মৌচাক মার্কেটে অঙ্গশ্রী টেইলার্স, রোজিয়া লেডিস টেইলার্স ও সিটি কলেজ সংলগ্ন সিটি টেইলার্সসহ মহানগরীর বিভিন্ন টেইলার্সে একই রকম মূল্য রাখা হচ্ছে। গত শবে বরাত থেকে শুরু হয়েছে, কাপড় কাটিং ও সেলাইয়ের কাজ- চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত।
রোজিয়া টেইলার্সের ফয়সাল জানান, ‘এখন সকাল ১০টা থেকে কাজ শুরু হয়ে রাত ৩টা পর্যন্ত চলে। প্রতিদিন একজন কারিগর ২০ সেট জামা তৈরি করে থাকেন। সালোয়ার কামিজ, লং কামিজ, জিপসি, কোণা কাটা ও চুড়িদার পায়জামার চাহিদা এবার বেশি কাপড় কাটিং ও সেলাই মজুরি ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত রাখা হয়।’ অপরদিকে, সিটি কলেজ সংলগ্ন রাজার হাতা এলাকার সিটি টেইলার্সের প্রসণজিৎ জানান, গতবারের চেয়ে এবার ঈদে কাজের চাপ বেশি। তাদের প্রতিষ্ঠানে ১২ জন কারিগর প্রতিদিন ৫০ সেট কাপড় সেলাই করে থাকেন। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন তাঁরা। সেলাই মজুরি ২৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হচ্ছে।
সেলাইয়ের ধরন ও নকশার ভিন্নতার জন্য মজুরি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। লং কামিজ বানাতে খরচ পড়বে ৩৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা, ডাবল কামিজ-সালোয়ারসহ ৬৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, আনারকলি বানাতে খরচ পড়বে ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত, ফ্রক কাটের সালোয়ার-কামিজে খরচ পড়বে ৮০০ টাকা থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত, সুতি কাপড়ের সালোয়ার-কামিজের খরচ নকশাভেদে ৩৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। ব্লাউজ ডিজাইনভেদে ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত।
পছন্দের পোশাককে বৈচিত্র্যময় করার আকাঙ্ক্ষা কমবেশি সবারই থাকে। সেক্ষেত্রে লেইসের জুড়ি মেলা ভার। বৈচিত্র্যময় এসব লেইস বর্তমান পোশাকের ফ্যাশনে অন্যতম অনুষঙ্গ। এক টুকরো লেইস ব্যবহারে আপনার পোশাক হয়ে উঠবে আরো বেশি আকর্ষণীয়। পোশাকের গলা বা হাতার কাটছাঁটে ব্যবহার করতে পারেন রং-বেরঙের লেইস। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইন ও নকশার লেইস। লেইসের দরদাম নকশা আর কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে। পাথরের চওড়া লেইস গজপ্রতি ২৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা, ইয়োকের ওপর পাথরের কাজ করা লেইস পাবেন ৪৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, এম্ব্রয়ডারি করা ইয়োক ১২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা, নেট লেইস ৫০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, কাতানের লেইস ৩৫ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত দরে কিনতে পারেন। বাহারি রঙের আকর্ষণীয় এসব লেইস চাঁদনীচক, গাউছিয়াসহ প্রায় সব থান কাপড়ের মার্কেটেই পাওয়া যাবে।
মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও দর্জিবাড়িতে যাতায়াত শুরু করেছেন। ঈদে ছেলেদের পছন্দের পোশাকের শীর্ষে রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, কমপ্লিট স্যুট। আর পাঞ্জাবি তো থাকছেই। ছেলেদের পাঞ্জাবি বানাতে খরচ পড়বে ৪৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। পায়জামার জন্য দিতে হবে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা, শার্ট বানাতে খরচ হবে ৪০০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা, প্যান্ট ৪৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, কমপ্লিট স্যুট চার হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৭০০০ টাকা, আর শুধু স্যুট বানাতে মজুরি লাগবে তিন হাজার টাকা থেকে চার হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
রাজধানীর নিউমার্কেট, মৌচাক মার্কেট, চাঁদনীচক, ফরচুন মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেটে রয়েছে মেয়েদের বেশির ভাগ টেইলারিং শপ। এ ছাড়া বসুন্ধরা সিটি, গুলশান, পিংক সিটি, ইউনিকর্ন প্লাজা, মিরপুর শাহ আলী, উত্তরা রাজউক কমার্শিয়াল মার্কেট, আমিন কমপ্লেক্স, রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স প্রভৃতি স্থানে মেয়েদের দর্জিঘর রয়েছে। আর ছেলেদের জন্য সোহেল টেইলার্স, বেলমন্ট, স্টার টেইলার্স, ফ্রেন্ডস টেইলার্স, সিটি এলিগেন্স, দ্য রেমন্ড শপ, আইকন টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্স, সানমুন, টপটেন, ফেরদৌস, ডায়মন্ড প্রভৃতি টেইলার্স থেকে বানিয়ে নিতে পারেন আপনার চাহিদামতো ঈদ পোশাক।