সময় মতো নির্বাচন দিন, অন্তর্বর্তী সরকারকে গয়েশ্বর
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/09/gyyeshbr.jpg)
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা—তা দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কোনো কালবিলম্ব না করে সময় মতো, যৌক্তিক টাইমে নির্বাচন দিন, সবাই আপনাদের সেলুট জানাবে।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ১২ দলীয় জোটের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এসব কথা বলেন।
সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে প্রণীত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষ এই প্রশিক্ষণ কর্মশালাটির আয়োজন করে ১২ দলীয় জোট। নেতাকর্মীদের মধ্যে ৩১ দফা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদি আমিন।
গয়েশ্বর বলেন, জনগণ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই অদৃশ্য শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে। একজন (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র করে কাপড় নিয়ে দেশে ছেড়ে পালিয়েছেন। এখন যারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তারা আগামী দিনে কাপড় পরে পালানোর পথ পাবেন না। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমার দেখেছি রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। প্রধান উপদেষ্টা বলেন এক কথা, তার সহকারীরা বলেন আরেক কথা।
সম্প্রতি ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের ঘটনা উল্লেখ গয়েশ্বর রায় বলেন, ৬ থেকে ৮ আগস্ট যদি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুর করে পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করতো কেউ কিছু বলতো না। ৬ মাস পরে আমাদের এই চেতনা বোধ আসলো কেন? আমার যদি ব্যাক ট্রেডিশন তৈরি করি, তাহলে আগামীদিন আপনার, আমার বাড়ি ভাঙচুর হবে। ভাঙচুরের নামে বাজে ট্রেডিশন চললে সংস্কার করে কী লাভ? এখন শেখ মুজিবের মৃত দিবস পালিত হবে ৫ আগস্ট। শেখ হাসিনা তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারকে পেছন থেকে কারা ইন্ধন দিচ্ছে তা দেশের মানুষ জানে।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ইসলামের নামে কারা দখলবাজি করছে তা বিভিন্ন দপ্তরে গেলে জানা যাবে। ৩১ দফা একটি জাতীয় সনদ। ৬২টি দল একমত হয়ে এই সদন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ৩১ দফা আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্তত সরব ও বহুল চলমান একটি বিষয়। এটি বস্তুত পক্ষে সমগ্র বাঙালি জাতির মনের আঙ্কারার প্রতিফলন ঘটবে। এব্যাপারে আমাদের কারও কোনো দ্বিমত নেই। আমার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিস্থিত হলে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিটি দফা বাস্তবায়ন করবো। আমাদের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধাকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। তাহলে আমাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফল ঘটবে।
জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী সরকারের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমরা চূড়ান্তভাবে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ রাজপথে ছিলাম। জুলাই আগস্টের যে অভ্যুত্থান, আমরা বিগত ১৫ বছর বিশ্বাস করতাম এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হবে। হঠাৎ করেই গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা শুনে, ধৈর্যধারণ করে আগামীর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে কাজ শুরু করেছি। তবে বর্তমানে আমরা একটা অশনিসংকেত দেখছি, আমরা আতঙ্কিত। কয়েকজনের উসকানিতে সমগ্র জাতি আজ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টারা বিপ্লবের চেতনা ধারণ করছেন না। তারা নিজেরা আখের গোছানোর কাজে ব্যস্ত আছেন।
এসময় আরও বক্তব্য দেন ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম, ইসলামি ঐক্য জোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, ১২ দলীয় জোটের নেতা ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান ফিরোজ মো. লিটন, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ মান্নান প্রমুখ।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ১২ দলীয় জোটের সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।