‘তোমরা আমার স্বামীকে এনে দাও, তা না হলে আমিও মারা যাব’
গ্রামের খালে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ জেলে বিপুল মন্ডলের (৪০) পরিবারে চলছে শোকের মাতম। স্বামীর শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী মনি মন্ডল। বিলাপ করে উপস্থিত এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে মনি মন্ডল বলছেন, ‘আমার স্বামীর কোন রোগ নেই। সে একজন সুস্থ মানুষ। প্রতিদিন মাছ ধরে রাতে বাড়িতে আসে। আজ কেন ফিরে এলো না। তোমরা আমার স্বামীকে এনে দাও, তা না হলে আমিও মারা যাবো’।
বিপুল মন্ডলের পড়নের লুঙ্গি হাতে নিয়ে বিলাপ করতে করতে মনি মন্ডল আরও বলেন, ‘আমি আমার স্বামীর গায়ের পোশাকের গন্ধ সুকেই বলে দিতে পারি এটি তার পোশাক। নৌকায় আমার স্বামীর পরনের লুঙ্গি, লাইট ও মোবাইলফোন পাওয়া গেছে। তাহলে আমার স্বামী গেল কোথায়?’
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বিপুল মন্ডল (৪০) নামের এক জেলে। গতকাল শনিবার (৮ জানুয়ারি) দিনগত রাতে উপজেলার গচাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ বিপুল মন্ডল গচাপাড়া গ্রামের মৃত মতিলাল মন্ডলের ছেলে। বিপুল মন্ডলের স্ত্রী, ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির নিখোঁজে পরিবারে চলছে শোকের মাতম।
জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেলে বিপুল মাছ ধরার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে সে বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুজি করে আজ রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে পার্শ্ববর্তী ভূয়ারপাড় গ্রামের খালে বিপুলের মাছ ধরার নৌকা দেখতে পায়। নৌকায় বিপুলের মোবাইলফোন, লাইট ও কাপড় পড়ে রয়েছে।
এ ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন কোটালীপাড়া ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। তারা ঘটনাস্থলে গিলে আজ রোববার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত পয়সারহাট-কোটালীপাড়া খালের গাচাপাড়া থেকে ভুয়ারপাড় এলাকায় তল্লাশি চালিয়েও বিপুলের সন্ধান পায়নি।
এলাকার ইউপি সদস্য আবুল কালাম মিয়া বলেন, বিপুল একজন ভালো মানুষ। এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়েই তার সংসার। মাছ ধরেই তার সংসার চলে। এলাকায় তার কোনো শত্রু ছিল না। কোন কারণে বিপুল নিখোঁজ হলো তা আমরা এলাকাবাসী বুঝতে পারছি না।
কোটালীপাড়া ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার লিয়াকত হোসেন বলেন, সকাল ১০টায় আমরা বিপুলের নিখোঁজের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আসি। পরবর্তীতে মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের ৩ জন ডুবুরিকে এনে সকাল ১১টা থেকে উদ্ধার অভিযান চালিয়ে আসছি। এখনও বিপুলের কোনো সন্ধান পাইনি।
কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি জানার পরেই আমি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।