খনিজ চুক্তি সই না করেই হোয়াইট হাউস ছাড়লেন জেলেনস্কি

ওভাল অফিসে একটি বিশেষ বৈঠকে অসম্মানজনক আচরণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে খনিজ চুক্তি না করেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও এই চুক্তিটি রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ বন্ধের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে—এমনটাই বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ধারণা করা হচ্ছে, বিস্ময়কর ঘটনাগুলো ইউরোপ এবং বিশ্বজুড়ে পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেতে পারে। এই সফরে ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ইউক্রেনের বিরল খনিজ সম্পদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি প্রবেশাধিকার দিতে একটি চুক্তি সই করবে এবং একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে আশা করা হয়েছিল। তবে নেতাদের মধ্যে উত্তপ্ত আলোচনার পরে সংবাদ সম্মেলনের সেই পরিকল্পনাটি ভেস্তে যায়।
যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিয়েভে পাঠানো ১৮০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আমেরিকান সহায়তার অর্থ পরিশোধের জন্য চুক্তিটি অপরিহার্য বলে জোর দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তবে এটি স্পষ্ট নয় যে, তার অমতের পরিণতি কী হতে পারে। এখন চুক্তিটিকে আবার সঠিক পথে ফেরাতে জন্য জেলেনস্কির সঙ্গে কী করতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প—তা এখন দেকার বিষয়।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইউক্রেনের নেতাকে তিরস্কার করে হোয়াইট হাউস ছাড়তে বলার পরপরই ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টারা তাকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বলেন।
জেলেনস্কিকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের নিয়ে তামাশা করছেন। আপনি যা করছেন তা দেশের জন্য খুবই অসম্মানজনক। এই দেশটি আপনাকে অনেক বেশি সমর্থন করেছে।’
প্রায় ৪৫ মিনিটের বৈঠকের শেষ ১০ মিনিট ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং জেলেনস্কির মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। যারা বিশ্বে মস্কোর বছরের পর বছর ধরে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কথা উল্লেখ করে কূটনীতির প্রতি রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে সংশয়ের কথা বলে আসছেন।
বৈঠকে জেলেনস্কির মূল উদ্দেশ্য ছিল ট্রাম্পকে তার দেশকে পরিত্যাগ না করার জন্য চাপ দেওয়া। একই সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের খুব কাছাকাছি যাওয়ার বিরুদ্ধে সতর্ক করা। কিন্ত ট্রাম্প এর পরিবর্তে উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করেন।
এক পর্যায়ে জেলেনস্কি বলেন, পুতিন যুদ্ধবিরতি ও অন্যান্য চুক্তির বিষয়ে ২৫ বার 'নিজের প্রতিশ্রুতি' ভেঙেছেন এবং তাকে বিশ্বাস করা যায় না।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, পুতিন তার সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করেননি। ইউক্রেনকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন খনিজ চুক্তি— যা এখন স্থগিত রয়েছে—কার্যকরভাবে লড়াইয়ের অবসান ঘটাবে।
ভ্যান্স জেলেনস্কিকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার পর পরিস্থিতি প্রথম আলোচনায় আসে এবং তাকে বলেন, ‘জনাব প্রেসিডেন্ট, সম্মানের সঙ্গে বলছি, আমি মনে করি ওভাল অফিসে এসে আমেরিকান মিডিয়ার সামনে অভিযোগ করার চেষ্টা করা আপনার জন্য অসম্মানজনক। জেলেনস্কি আপত্তি জানানোর চেষ্টা করলে ট্রাম্প উচ্চস্বরে বলেন, 'আপনি লাখ লাখ মানুষের জীবন নিয়ে জুয়া খেলছেন।’
আরেক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেকে ‘মধ্যস্থতাকারী’ বলে দাবি করেন। বলেন তিনি সংঘাতে ইউক্রেন বা রাশিয়ার পক্ষে নয়। তিনি পুতিনের প্রতি জেলেনস্কির ‘ঘৃণা’কে শান্তির পথে বাধা বলে উপহাস করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘পুতিনের প্রতি তার ঘৃণা আপনারা দেখেছেন। এ ধরনের ঘৃণার সঙ্গে চুক্তি করা আমার জন্য খুবই কঠিন।’