‘বোঝা চাপায়া অর্থমন্ত্রী কি যক্ষের ধন পাহারা দেওয়াবেন?’
প্রস্তাবিত বাজেটে (২০১৭-২০১৮) ব্যাংকের আমানতে আবগারি শুল্ক বাড়ানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বিএনপির রাজনীতি নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন।
মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘৮০-৮৫ লক্ষ লোক এই ট্যাক্স দেয়। আর এদের মধ্যে ৭০-৭৫ লক্ষ লোকই এক লক্ষ টাকা এক থেকে দশ লক্ষ টাকার আমানতকারী। এরাই দেবে ২০০ কোটি টাকার ওপরে এবং এই টাকার জন্য আমরা কি এই বিপুলসংখ্যক লোক যাদের আয়, তাদের আয় আমরা কমিয়ে দেব? এটা করলে তো মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ওই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গুপ্তধন গল্পের সেই পিতামহে পরিণত হতে হবে—যে নাকি যক্ষক বানায়া নিজের নাতিরে হত্যা কইর্যা সেই গুপ্তধন পাহারায় বসায়া দিছিল। উনি কি জনগণের ওপরে এই বোঝা চাপায়া আমাদের যক্ষের ধন পাহারা দেওয়াবেন? এই প্রশ্নটা আমি রাখতে চাই। মাননীয় স্পিকার আমার মতে এই প্রস্তাব পুনর্বিবেচনার যোগ্য।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের গত নয় বছরে বাজেটের আকার কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সময়ে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বেড়েছে সাড়ে তিনগুণেরও বেশি। পাশাপাশি ধারাবাহিকভাবে সরকার সাফল্যের সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় নিয়ে যেতে সম্ভব হয়েছে। এ বাজেটও সফলভাবে বাস্তবায়িত হবে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে আজ বেলা ১১টা ৩ মিনিটে অধিবেশনের শুরুতে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা-উত্তর টেবিলে উপস্থাপন শেষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শুরু হয়।
গত ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। এতে ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়িয়ে বছরে ৮০০ টাকার করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বর্তমানে এ শুল্ক ৫০০ টাকা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, গত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। তারা ধ্বংসযজ্ঞ না চালালে প্রবৃদ্ধি অনেক আগেই ৭-এর ঘরে পৌঁছাত। এরপরও বর্তমান সরকারের সময় দেশ উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং বিগত নয় বছরে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উপনীত হয়েছে। এই সরকারের সময়ই ডাবল ডিজিটে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। তবে এর জন্য প্রয়োজন দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই গতিতে যদি দেশ চলে তাহলে ২০৪১ সালের অনেক আগেই বাংলাদেশ বিশ্বে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ বৃদ্ধি করায় ধন্যবাদ জানান। ট্রাক্টরের ওপর কর প্রস্তাবকে ‘মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী এর ওপর থেকে প্রস্তাবিত কর প্রত্যাহার, ব্যাংক আমানতের ওপর থেকে আবগারি শুল্ক প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করাসহ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার না কমানোর আহ্বান জানান।
প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে খালেদা জিয়ার সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বেগম সাহেব, লুটপাট কত প্রকার, কী কী তা উদাহরণসহ যদি বলতে হয় তাহলে আপনার পুত্র এবং পার্টির নামটাই আসবে। আপনার দুই পুত্র তো লাগেজ পার্টি হিসেবে পরিচিত। আপনি অন্যের সম্পর্কে কথা বলতে গেলে একটু মেপে বলবেন।’