কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুজনের মৃত্যু
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/07/13/photo-1499951686.jpg)
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের পানির পরিমাণ বাড়ছে। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার পানিবন্দি দুই লাখেরও বেশি মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে বন্যার পানিতে ডুবে দুজন মারা গেছেন। এদের একজন হলেন, চিলমারী উপজেলার শাখাহাতি গ্রামের লাইলী বেগম (২৮) ও সদর উপজেলার খামার হলোখানা গ্রামের হামিদুল হক (১৭)। স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে জেলায় ৮৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ও সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবল স্রোতে চিলমারী উপজেলার কাঁচকোলে ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের ৫০ মিটার বাঁধ ও রৌমারী উপজেলার যাদুর চরে কত্তিমারী বাজার রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে নতুন করে ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৭ উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের পাঁচশো গ্রামের দুই লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দী জীবন যাপন করছে। অনেক পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে উচুঁ জায়গায় আশ্রয় নিলেও এসব এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দেড়শটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
জেলায় এক হাজার হেক্টর জমির আউশ, পাট, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সরকারিভাবে স্বল্প পরিসরে ত্রাণ তৎপরতা শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এখন পর্যন্ত বেসরকারি কোনো ত্রাণ তৎপরতা চোখে পড়েনি।
সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার চর ভগবতিরপুরের আমজাদ আলী বলেন, ‘ছয়দিন ধরে পানিবন্দি অবস্থায় বউ-বাচ্চা নিয়ে নৌকায় জীবন যাপন করছি। বাড়িঘর, গরু-ছাগল ছেড়ে কোথাও যাব সেই জায়গাও নাই। এমন অবস্থায় ঘরে খাবারও শেষ হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বররা ১০ কেজি করে চাল দিচ্ছে তাও সবাই পাচ্ছে না।’
একই চরের আমেনা বেগম বলেন, ‘ঘরের ভিতর চৌকি ভাসিয়ে কোনো রকমে একবেলা রান্না করে ছেলেমেয়েদের খাওয়াচ্ছি। খুব কষ্টে দিন যাচ্ছে আমাদের।’
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমান উদ্দিন মঞ্জু বলেন, ‘আমার উপজেলার আট ইউনিয়নের মধ্যে ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। সরকারিভাবে ২০ টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি যা বিতরনণ করা হচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন এসএম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বুধবার বিকেলে বন্যার পানিতে ডুবে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে লাইলী বেগম মৃগী রোগী। চরাঞ্চলে ৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক তলিয়ে যাওয়ায় পাশ্ববর্তী উচুঁ জায়গায় কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। জেলার বন্যাকবলিত এলাকা গুলোতে ৮৭টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। স্বাস্থ্য বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, জেলার নয় উপজেলার মধ্যে বন্যাকবলিত সাত উপজেলায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে এপর্যন্ত তিনশো টন চাল, আট লাখ টাকা ও দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরো নতুন করে ১০০ টন চাল, দুই হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট ও তিন লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার, সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি ৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।