‘দিনে-দুপুরে চুরি করতেছি’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/08/dhanmondi_32.jpg)
রাজধানীর ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে ছাত্র-জনতার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে শেখ মুজিবের বাড়ি। সেখানে থাকা দুটি ভবনের অনেকাংশ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এসকেভেটর দিয়ে ভাঙার পর থেকে ভবনের ইট, লোহা থেকে শুরু করে সবকিছুই নিয়ে যেতে থাকে উৎসুক জনতা। দুই দিন পর আজ শনিবারও (৮ ফেব্রুয়ারি) ধ্বংসস্তূপ থেকে রড বের করে নিচ্ছেন অনেকে। তাদের একজন তো বলেই ফেললেন, ‘দিনে-দুপুরে চুরি করতেছি।’
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে সরেজমিনে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপ দেখতে সেখানে অনেক উৎসুক ভিড় জমাচ্ছেন। তবে, তা গত দুদিনের চেয়ে সংখ্যায় কম। অনেকে ছবি তুলছেন। ভিডিও করছেন। কেউ কেউ আবার কনক্রিটের ভেতরে থাকা রড খুলে নিয়ে যাচ্ছেন। ওই রড খোলার জন্য হাতুড়ি দিয়ে ইট-বালু-সিমেন্টের কনক্রিট ভাঙছেন।
ভবনগুলোর আশপাশে অবশ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। একজন পুলিশ সদস্যের দেখা মিললেও তাকে দর্শকের ভূমিকায় দেখা গেছে।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া দুটি ভবনের একটির সামনে কনক্রিট ভাঙছেন পাঁচজন। তাদের একজনের কাছে জানতে চাওয়া কী করছেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দিনে দুপুরে চুরি করতেছি। তারপর বাসায় নিয়ে যাব।’
কোথা থেকে এসেছেন জানতে চাইলে তিনি আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। কনক্রিট ভেঙে চলছেন। তার পাশে থেকে আরেকজন বললেন, ‘অনেক কষ্ট করে রড বের করতে হচ্ছে। তারপরও করছি। যদি দুটো টাকা হয়।’
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া আরেকটি ভবনের কনক্রিট থেকে লোহা খুলছেন মোজাম্মেল হোসেন। সঙ্গে তার স্ত্রীও আছেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘লোহা টোকাই।’
এরপর তাদের বলা হয়, একজন বললেন, দিনে দুপুরে চুরি করতেছি। আপনারাও কী তাই? এ প্রশ্নের জবাবে স্বামী-স্ত্রী দুজনই জানালেন, ‘প্রকাশ্যেই রড খুলছি। মানুষ দেখছে, এটা চুরি হবে না। জনগণের সম্পদ, জনগণ খুলে নিয়ে যাচ্ছে।’
সেখানে আরও অনেকে রড খুলছিল। তাদের কারও ভাষ্য, খুলে নেওয়া ওই রড বিক্রি করে দেবেন। কেউ আবার স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবেন। শহিদুল নামের একজন একটি রড হাতে বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বললেন, ‘এই রড স্মৃতি হিসেবে রেখে দেব। সেজন্য নিয়ে যাচ্ছি।’
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি ধানমণ্ডি-৩২ নম্বরে গিয়ে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া একটি ভবনের পেছনে গত বছরের ৫ আগস্ট পুড়ে যাওয়া তিনটি মাইক্রোবাস রাখা ছিল। ওই মাইক্রোবাস তিনটি পোড়ার পর অবশিষ্ট থাকা লোহাগুলো খুলে নিয়ে যাচ্ছিল জনতা। আজ সেখানে গিয়ে পুড়ে যাওয়া তিনটি মাইক্রোবাসের এক খণ্ড লোহাও সেখানে পড়ে থাকতে দেখা যায়নি। অর্থাৎ, সব লোহা খুলে নিয়ে গেছে উৎসুক জনতা।
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনলাইনে একটি অডিও ভাষণকে কেন্দ্র করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের শেখ মুজিবের বাড়ি ও শেখ হাসির বাসভবন সুধা সদনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা।