বিলুপ্ত ছিটমহলে মধ্যরাত থেকে উৎসব
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/08/01/photo-1501597229.jpg)
৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিট। ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে ও কেক কেটে দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে আনন্দ ও উৎসব শুরু করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরের সবচেয়ে বড় বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দারা। মোমবাতি জ্বালিয়ে একই সময়ে একই কর্মসূচি পালিত হয় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও পঞ্চগড়ের ১১১টি বিলুপ্ত ছিটমহলে।
আজ মঙ্গলবার সকালে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু করে এসব এলাকার বাসিন্দারা। আনন্দ মিছিল, আলোচনা সভা, লাঠিখেলা, হাডুডু খেলাসহ দিনভর চলে নানা গ্রামীণ উৎসব।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সভাপতি মঈনুল হক ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফাসহ অন্যান্য নেতা ও বিলুপ্ত ছিটের সর্বস্তরের মানুষ।
১৯৭৪ সালের ইন্দিরা-মজিব চুক্তির আলোকে হাসিনা-মনমোহন প্রটোকল স্বাক্ষরের পর ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বিলুপ্ত হয় বাংলাদেশ-ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহল। অবসান হয় ছিটবাসীদের ৬৮ বছরের বন্দিজীবনের। বাংলাদেশের অভ্যন্তরের ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিটমহল কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়ায় রাত ১২টা ১ মিনিটে ৬৮টি মোমবাতি জ্বালিয়ে এই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখে স্থানীয় বাসিন্দারা। একই কর্মসূচি পালন করে দাসিয়ারছড়াসহ কুড়িগ্রামে-১২টি, লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি এবং নীলফামারী জেলার সাবেক হয়ে যাওয়া চারটি ছিটমহলে।
দাসিয়ারছড়ায় ২২ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, সেতু-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা।
দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দা মোজাফ্ফর হোসেন জানান, ‘আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি, পাকা সড়ক পেয়েছি, কমিউনিটি ক্লিনিক পেয়েছি, স্কুল-কলেজ পেয়েছি। আমরা সাবেক ছিটের বাসিন্দা সরকারের ভিজিএফ, ভিজিডিসহ সকল সুবিধা ভোগ করছি।’
দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হালিমা খাতুন বলেন, ‘আগে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মিথ্যা ঠিকানা দিয়ে বাংলাদেশের স্কুলে পড়তে হতো। এখন বিলুপ্ত ছিটমহলে গড়ে ওঠা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করতে পেরে খুশি আমরা। সরকারকে ধন্যবাদ জানাই আমরা।’
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘৬৮ বছরের বন্দিজীবনের অবসান ঘটিয়ে দুই বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া ছিটমহলগুলোতে ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় আমরা সবাই অত্যন্ত খুশি।’ প্রতিবছর এ দিনটিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে মধ্যরাতে মোমবাতি প্রজ্বালনসহ ১ আগস্ট দিনভর নানা কর্মসূচির কথা জানান তিনি। তবে দেশের অভ্যন্তরের সবচেয়ে বড় বিলুপ্ত ছিটমহলকে ইউনিয়ন করার দাবি তাঁর।
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় ১১১টি ছিটের ৪১ হাজার ৪৪৯ জন মানুষ বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে গণ্য হয়। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি ছিটমহলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় ৪৭টি এবং জলপাইগুড়ি জেলায় চারটি বিলুপ্ত ছিটমহলের ১৪ হাজার ২১১ জন মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব পায়।
ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ পায় ১৭ হাজার ২৫৮ একর এবং ভারত পায় সাত হাজার ১১০ একর জমি।