‘দুর্নীতি করব না, এটা হতে পারে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন’
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘নিজে দুর্নীতি করব না—এটা হতে পারে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধার একটি নিদর্শন।’ আজ বুধবার দুদকের উদ্যোগে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় দুদক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলোচনা সভার শুরুতেই দুদক চেয়ারম্যান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, জাতির পিতার তিন সন্তানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শহীদদের এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সব শহীদ ও সম্ভ্রব হারানো মা-বোনদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
এ সময় দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, অজপাড়াগাঁয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সুবিধাবঞ্চিত অনগ্রসর অঞ্চল থেকে কেবল সাহস এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার কারণেই বঙ্গবন্ধু এই পর্যায়ে উঠে এসেছেন। আমার কাছে মনে হয়, বঙ্গবন্ধুকে এখনও সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। যত দিন যাবে, ততই জাতির পিতা সঠিকভাবে মূল্যায়িত হবেন।
বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আজকের বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০৬৪ মার্কিন ডলার, সেখানে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ১১৩০ মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৫.২ শতাংশ, পক্ষান্তরে পাকিস্তানের ০.৪ শতাংশ; বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পাকিস্তানের মাত্র ২০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, বাংলাদেশের গড় আয়ু যেখানে ৭২ বছরেরও বেশি তা পাকিস্তানের ৬৭ বছর, বাংলাদেশের শিশু মৃত্যু প্রতি হাজারে ২৫ জন, অপরদিকে পাকিস্তানে ৫৯ জন, প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের হার ৯৮ শতাংশ, পাকিস্তানে তা ৭২ শতাংশ। এর মানে কী? এর অর্থ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, দেশ স্বাধীন না হলে উন্নয়ন হবে না। এখানেই বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা। উন্নয়নের এ অভিযাত্রায় সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হলে, বাংলাদেশ আজ এসব দেশের কাতারেই থাকত।
আলোচনা সভায় দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যখন চিন্তা করি, তখন মানসপটে ভেসে ওঠে একটি তর্জনী, বজ্রকণ্ঠ ও একটি মুষ্টিবদ্ধ হাত। এর ভাষা হচ্ছে অন্যায়-অবিচার-নিপীড়ন-নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার একটি কণ্ঠ। স্বাধীনতার আগেই এই ভূখণ্ডের নাম বাংলাদেশ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, জাতির পিতা দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা ছিলেন বলেই ১৯৭৩ সালেই বাংলাদেশ আইটিইউর সদস্য পদ গ্রহণ করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিত্তি তিনিই স্থাপন করে দিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালেই বেতবুনিয়ায় ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আশির দশকেই বাংলাদেশ নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারত। যদিও তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০১৮ সালে সেই স্যাটেলাইট আমাদের হয়েছে।
দুদক সচিব ড. মোহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনো দিন অন্যায়কে মেনে নেননি। সব সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি খোকা থেকে শেখ মুজিব, শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির পিতা হয়েছেন। তিনি একসময় ছিলেন জাতির সম্পদ, আজ তিনি আন্তর্জাতিক সম্পদে পরিণত হয়েছেন।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন, সংস্থাপন ও অর্থ) মো. জহির রায়হানের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন মহাপরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত - ১) মো. রেজানুর রহমান, পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. কামরুল আহসান, রাজশাহীর উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।