সাতক্ষীরায় আসছেন নরেন্দ্র মোদি, উৎসবমুখর ঈশ্বরীপুর
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/03/27/temple.jpg)
বাংলাদেশ সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ শনিবার সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের ঈশ্বরীপুর গ্রামে যাবেন। সেখানে রাজা লক্ষণ সেনের আমলে প্রতিষ্ঠিত যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পূজা দেওয়ার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্বাগত জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় নেওয়া হয়েছে গোটা ঈশ্বরীপুর এলাকা।
বহুদূর বিস্তৃত নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে জনসাধারণের যাতায়াত সীমিত করা হয়েছে। যশোরেশ্বরী দেবী মন্দিরসহ রাস্তাঘাটের সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। মন্দির চত্বরে রাষ্ট্রীয় এই অতিথির জন্য নতুন অবকাঠামো গড়ে তুলে বিশ্রাম ও আপ্যায়ন কক্ষ সাজানো হয়েছে। এসব অবকাঠামোর গায়ে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সুন্দরবন এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দৃশ্যসহ সাতক্ষীরার ইতিহাস ঐতিহ্য ও উন্নয়নচিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
এ ছাড়া ঈশ্বরীপুর এলাকায় চারটি হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছে। সড়কের ধারে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড। সেখানে উড়ছে দুই দেশের পতাকাও।
আজ শনিবার সকালে ঈশ্বরীপুরের এ. সোবহান হাইস্কুল ময়দানে অবতরণের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সুসজ্জিত মোটর শোভাযাত্রায় ৯০০ মিটার দূরে মন্দির প্রাঙ্গণে পৌঁছাবেন। সেখানে তিনি শক্তিপীঠে পূজা দেবেন বলে জানা গেছে।
মাত্র ২০ মিনিটের সফর শেষে বিশেষ হেলিকপ্টারে তাঁর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিস্থলে যাওয়ার কথা রয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি শনিবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে হেলিকপ্টার থেকে ঈশ্বরীপুরে অবতরণ করবেন এবং ১০টা ১০ মিনিটে তিনি টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে রওনা হবেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে সাতক্ষীরা প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।
যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরটি ভক্তদের কাছে ‘শক্তি দেবতা’র মন্দির। ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাংলাদেশ সফরের শেষ দিনে আজ ঈশ্বরীপুর গ্রামে গিয়ে এই যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে পূজা দেবেন।
ধারণা করা হয়, দ্বাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে আনারি নামের একজন ব্রাহ্মণ এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। তিনি যশোরেশ্বরী পীঠের জন্য শত দরজার মন্দির তৈরি করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাজা লক্ষ্মণ সেন এটি সংস্কার করেন এবং সর্বশেষ রাজা প্রতাপাদিত্য ষোড়শ শতাব্দীতে মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরটি ৫১টি শক্তি পীঠের মধ্যে একটি। এই পীঠগুলো ভারতসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ছড়িয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে ছয়টি পীঠ।
হিন্দু পুরাণ অনুসারে, ৫১টি পীঠের মধ্যে ঈশ্বরীপুরের মন্দিরের স্থানে দেবী সতীর হাতের তালু ও পায়ের পাতা এসে পড়েছিল। শক্তিপীঠের পেছনের ঘটনাটি হলো- স্বামী শিবের অপমান সইতে না পেরে দেবী সতীর আত্মহননের পর, শিব সতীর মরদেহ নিয়ে ‘তাণ্ডব’ নৃত্য করতে থাকেন। বিষ্ণু এই প্রলয়নৃত্য থামানোর জন্য সুদর্শন চক্র ব্যবহার করেন। এতে সতীর মৃতদেহ ছিন্ন হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পড়েছিল। হিন্দু পুরাণ অনুসারে যেসব জায়গায় সতীর দেহের অংশ পড়েছিল সেগুলোর প্রত্যেকটিকে বলা হয় শক্তিপীঠ।
এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি।
এদিকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরের খবরে যশোরেশ্বরী কালী মন্দির এলাকাটি উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই দিনের এক রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে নরেন্দ্র মোদিকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১০ দিনের অনুষ্ঠানমালায় যোগদানকারী বিশ্ব নেতাদের মধ্যে নরেন্দ্র মোদি হচ্ছেন পঞ্চম রাষ্ট্রীয় অতিথি।
বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর নরেন্দ্র মোদির এটাই প্রথম বিদেশ সফর।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতার পর নরেন্দ্র মোদি পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান। সেখানে স্মৃতিসৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
এরপর, নরেন্দ্র মোদি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান।
শুক্রবার দুপুরে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ১৪ দলীয় জোটের নেতারা। এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে একই স্থানে মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন প্রধান বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এমপি, বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত যশোরেশ্বরী দেবী মন্দির পরিদর্শন এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ পরিদর্শন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর তিনি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলায় ওড়াকান্দি মন্দির পরিদর্শন করবেন।
এদিন বিকেলে, নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে করবেন। একই সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ভার্চুয়ালি যৌথভাবে বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।
পরে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন নরেন্দ্র মোদি।