আগুনের মধ্য থেকে ভাইকে ফোন, ‘ভুল-ত্রুটি করলে মাফ করে দিস’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/09/nara-final.jpg)
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ গ্রুপের কারখানার অগ্নিকাণ্ডের পর প্রথমেই ভাইকে ফোন করেছিলেন সিনিয়র অপারেটর মোহাম্মদ আলী।
তখন বিকেল সাড়ে ৫টা। ছোটভাইকে মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, ‘ভাই, আমাদের কারখানায় আগুন লাগছে। কেউ বের হতে পারছি না। আমি যদি ভাই কোনো ভুল-ত্রুটি করে থাকি আমাকে মাফ করে দিস।’
মোহাম্মদ আলীর কথা শুনেই সব কাজ ফেলে ছোটভাই সাড়ে ৬টার দিকে ছুটে আসেন কারখানার সামনে। এসে দেখেন সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সেখানে তখন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের চারটি ইউনিট মাত্র এসেছে।
বিকেল ৬টার পর আর মোহাম্মদ আলীর কোনো খোঁজ পাননি ছোটভাই। তাঁর ফোনটিও বন্ধ দেখাচ্ছে। সেই থেকে এখনো কারখানার সামনে অপেক্ষায় আছেন ছোটভাই। কিন্তু কেউ তার ভাইয়ের হদিস দিতে পারছে না। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সবার কাছে যাচ্ছেন ছোটভাই। কিন্তু কেউ ভাই মোহাম্মদ আলীর কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। তিনি বেঁচে আছেন কি না তাও জানেন না ছোটভাই।
আজ শুক্রবার দুপুরে মোহাম্মদ আলীর ছোটভাই কারখানার সামনে এনটিভিকে বলছিলেন, ‘ভাই, শুধু একটা কথাই বলছিল, ভাই যদি ভুল-ত্রুটি করে থাকি তবে মাফ করে দিস।’
‘আমার ভাই এখানে সিনিয়র অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলো। উনি চারতলায় কাজ করতেন। আগুন লাগার পরে তিনতলা থেকে সর্বশেষ দোতলায় নেমেছিলেন। তাঁর বয়স ২৭ বছর হবে’, যোগ করেন মোহাম্মদ আলীর ছোটভাই।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ গ্রুপের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনজন এবং আজ শুক্রবার দুপুরের পর আরও ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও অর্ধশত।
গতকাল বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় হাশেম ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ গ্রুপের এই কারখানায় আগুন লাগে। রাতে দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এদিকে কারখানার অনেক শ্রমিক নিখোঁজ থাকায় তাদের স্বজনরা ছবি নিয়ে ঘটনাস্থলে আহাজারি করছেন।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারি পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, কী কারণে আগুন লেগেছে তা তদন্তের পর জানা যাবে। ধ্বংসস্তুপের ভিতরে আরও লাশ থাকতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। আরেফিন আরো জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ছয়তলার কিছু কিছু জায়গায় আগুন জ্বলছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।