সৌদিতে আটকে পড়া ওমরাহ যাত্রীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

বাংলাদেশ থেকে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করতে আসা ৫৭ জন বাংলাদেশি জেদ্দাসহ বিভিন্ন জায়গায় আটকে আছেন। তাদের মধ্যে কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে আসা ২২ জন ওমরাহ যাত্রী গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সৌদি এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ওমরাহ পালন করতে আসেন। তাদের গত ১৪ মার্চ সৌদি এয়ারলাইনসের ফিরতি ফ্লাইট ছিল।
কিন্তু শরিকা মক্কা থেকে ১০ মার্চ জানানো হয়, ফ্লাইটটি ১৪ মার্চের পরিবর্তে ১৫ মার্চ সৌদি সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় হবে। সে অনুযায়ী ১৫ মার্চ সকাল ১০টায় জেদ্দা এয়ারপোর্টে উপস্থিত হন। তাদের দুপুর ১২টায় মাল বুকিং দিতে বললে তারা মাল বুকিং দিতে ভেতরে প্রবেশ করলে জানানো হয় ফ্লাইটটি বাতিল। তৎক্ষণাৎ ওজারাতুল হজকে বিষয়টা জানালে তারা ১৭ মার্চ সৌদি সময় রাত সাড়ে ৩টায় সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিট ইস্যু করে তাদেরকে একটি হোটেলে পাঠানো হয়।
১৬ মার্চ বিকেলে ওজারাতুল হজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাতের ওই ফ্লাইটসহ সব ফ্লাইট বাতিল। এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে জানানো হয়, সৌদি সময় ১৭ মার্চ সকাল সাড়ে ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট আসবে। সেই সঙ্গে জেদ্দাস্থ নাখেল সেন্টারে অবস্থিত বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসের অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ টাকায় প্রায় ৩৫ হাজার করে টিকেট কেটে কিছু ওমরাহ যাত্রী ও আকামাধারীদের নিয়ে ফ্লাইটটি বাংলাদেশে পৌঁছায়। এর পর থেকে আর কোনো ফ্লাইট না থাকায় তারা বিভিন্ন স্থানে আটকে যায়।
ওজারাতুল হজ কোম্পানি থাকার জন্য হোটেল ব্যাবস্থা করলেও তাদের অনেকটা কষ্টের মধ্যেই সেখানে থাকতে হচ্ছে। ২২ জনকে চারটি রুম দেয়া হয়। খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশি মোয়াল্লিম মাওলানা মাইনুদ্দীন সরকার জানান, জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের কাউন্সিলর মাকসুদ সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি হজ বিষয়ক কর্মকর্তা হাসান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন। যোগাযোগ করলে তিনি সব তথ্যাদি নেন এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।
ওমরাহ যাত্রী কাঠ ব্যবসায়ী বাবুল মিয়া জানান, তাঁর তিন বছরের শিশু সন্তান রেখে স্বামী-স্ত্রী ওমরাহ করতে আসেন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় এবং বিশ্বময় করোনাভাইরাসের প্রকোপে এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়।
৮০ বছরের বৃদ্ধ ওমরাহ যাত্রী জারু মিয়া বলেন, ‘আমি জমি বিক্রি করে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা নিয়ে এসেছি। ফেরার পথে ফ্লাইটটি বাতিল হওয়ায় খাবারসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। সঙ্গে কোনো টাকাপয়সা না থাকায় অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
৯০ বছরের বৃদ্ধ ওমরাহ যাত্রী বাদশা মিয়া মোল্লা জানান, তিনি বয়স্ক মানুষ। শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ। থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসার অভাবে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
৮০ বছরের বৃদ্ধা ওমরাহ যাত্রী আয়ফলের নেসা জানান, তিনি হাইপ্রেসারের রোগী। সঙ্গে কোনো টাকাপয়সাও নেই। ফ্লাইট নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে প্রায় সময় প্রেসার বেড়ে যায়। অন্য দেশের সরকার তাদের ওমরাহ হজযাত্রীদের নিজ দেশে নিয়ে গেলেও বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ না থাকায় তাদের পড়তে হয়েছে নানা বিপাকে।
এমতাবস্থায় তারা জরুরি ভিত্তিতে মানবিক দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট সবার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন যাতে অতি দ্রুত তাদের নিজ গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়।