স্থাপত্যশৈলীর অপরূপ নিদর্শন ইবির কেন্দ্রীয় মসজিদ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মসজিদটি স্থাপত্যশৈলীর এক অপরূপ নিদর্শন। মসজিদটির সুউচ্চ মিনার আর সাদা গম্বুজগুলো আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেয়। বাতাসে ভেসে আসা আজানের ধ্বনি মসজিদ চত্বরে তৈরি করে এক সুমধুর পরিবেশ। তবে প্রায় ৩০ বছর পেরিয়ে গেলেও দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনার নির্মাণকাজ এখনো সম্পূর্ণ হয়নি।
১৯৯৪ সালে ইবির কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম মসজিদ এবং দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। সম্পূর্ণ নির্মাণকাজ শেষ হলে মসজিদটিতে একসঙ্গে ১৭ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। কিন্তু নানা জটিলতায় দীর্ঘ তিন দশকেও কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র জানায়, শুরুতে সরকারি অর্থায়নে নির্মাণকাজ শুরু হলেও পরে বিদেশি সহায়তা আসে। তবে মসজিদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় এবং কিছু অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করায় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের অর্থ ফেরত নিয়ে নেয়— ফলে মসজিদটির কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
২০০৪ সালে মসজিদের প্রায় ৩৬ শতাংশ কাজ শেষ হলে তৎকালীন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারফ হোসাইন শাহজাহান এটি উদ্বোধন করেন। সেদিনই সর্বসাধারণের জন্য নামাজের জন্য মসজিদটি উন্মুক্ত করে দেন। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকে, যার ফলে মসজিদটির নির্মাণকাজ থমকে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারীর সময় দুই দফায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ সম্প্রসারিত হয়। এরপর ১৩তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সালামের সময়ও কিছুটা অগ্রগতি হয়, কিন্তু এখনো পুরো কাজ শেষ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মনে করেন দ্রুত বর্ধিত অংশের কাজ সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনার মধ্যে কেন্দ্রীয় মসজিদটি সবচেয়ে অনন্য। মসজিদটির নির্মাণকাজ মেগা প্রকল্পের আওতাভুক্ত থাকলেও এর পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। মসজিদে এখনো বর্ধিতাংশের কিছু কাজ বাকি রয়েছে। বিভিন্ন প্রশাসন বারবার আসলেও এই অংশের কাজ শেষ হয়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন থাকবে— দ্রুত বর্ধিত অংশের কাজ সম্পন্ন করার। যাতে এটি শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বৃহত্তম না হয়ে পুরো বিশ্বেই অন্যতম হয়ে উঠতে পারে।’
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, ‘আমি ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি কিন্তু এখনো দেখছি আমাদের অন্যতম নিদর্শন কেন্দ্রীয় মসজিদের নির্মাণকাজ চলছে। প্রশাসন যায়—আসে, পরিবর্তন হয় কিন্তু আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিয়ে কারও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। আশা করি, বর্তমান জুলাই পরবর্তী প্রশাসন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়নরত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ সম্পন্ন করবে। এতে আমরা গর্বিত ইবিয়ান হিসেবে ক্যাম্পাস ছাড়তে পারব, মসজিদটি নিয়ে গর্ব করতে পারব।’
আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এইচ এম আবু মুসা বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে যতগুলো মসজিদ আছে, তার মধ্যে অন্যতম সর্ববৃহৎ মসজিদ হচ্ছে ইবির এই কেন্দ্রীয় মসজিদ। এই মসজিদে যারা আসবে তাদের হৃদয় শীতল হয়ে যাবে। এই মসজিদে যে নয়নাভিরাম দৃশ্যপট ও কারুকার্য রয়েছে, তা সাধারণত দেশের অন্য কোনো মসজিদে দেখা যায় না। এ ধরনের মসজিদ সাধারণত তুরস্কে দেখা যায়।’
তিনি বলেন, ‘যদি এই মসজিদের পূর্ণাঙ্গ কারুকাজ শেষ হয়, অসাধারণ একটি মসজিদ হবে। যারা বহুদূর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসে, তারা এই মসজিদে ঘুরতে এলে, এখানে নামাজ পড়লে একটি তৃপ্তি পাবে। তাই প্রশাসনের কাছে মসজিদের সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য দাবি জানাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ শুধু নামাজের জায়গা নয়, এটি ইবির ঐতিহ্যের প্রতীক। পরিকল্পিতভাবে নির্মাণকাজ শেষ করা গেলে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা মসজিদ হিসেবে বিবেচিত হবে।