৩০০ বছরের পুরোনো আশ্রাফ শিকদার জামে মসজিদ

মুসলিম জনগোষ্ঠীর নামাজ আদায়ের জন্য প্রয়োজন হয় মসজিদ নির্মাণের। ভোলা দ্বীপের বাসিন্দা আশ্রাফ আলী শিকদার আত্বীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হন বরিশালের উলানিয়া জমিদার বাড়ির সঙ্গে সেখান থেকে জমিদারী পেয়ে ভোলা শহরের ওয়েস্টার্ণ পাড়ায় বসতি স্থাপন করেন তিনি। নামাজ আদায়ের জন্য বাড়ির সামনে নির্মাণ করেন এক কক্ষ ও তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। মসজিদের পাশেই খনন করেন একটি দীঘী। মুসল্লিদের নামাজ ও গোসলের সুবিধার জন্য এবং বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখার জন্য এ দিঘি খনন করা হয়।
ধারণা করা হয়, প্রায় ৩০০ বছরের অধিক সময় পূর্বে মোঘল আমলের স্থাপত্য নকশায় নির্মিত হয় মসজিদটি। একটি বড় ও দুটি অপেক্ষাকৃত ছোট গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিতে সামনের দিকে দুই কোনে দুটি মিনার রয়েছে। মেহরারের সাথে রয়েছে ৪টি ছোট মিনার। সমজিদের পেছনের অংশেও ছয়টি মিনার রয়েছে। দক্ষিণ ও উত্তর পাশে রয়েছে ৪টি করে মিনার। পিলারগুলো মিনারের আদলে তৈরী। মসজিটির ভেতরের অংশে রয়েছে ২টি আর্চ। মোঘল আমলের স্থাপত্য নকশায় নির্মিত মসজিটির রয়েছে তিনটি দরজা। দরজা গুলো আকারে ছোট । দরজার চৌকাঠ ও খিলানগুলো এখনো রয়েছে অক্ষত। মসজিদটির দক্ষিণ ও উত্তর পাশে রয়েছে ছোট দুটি জানালা। এত শত বছর আগে এমন দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা কিভাবে নির্মাণ করা হলো তা নিয়ে বিষ্মিত বর্তমান প্রজন্ম।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, প্রায় ৩০০ বছর আগে নির্মিত মসজিদটিতে মাত্র দুটি কাতারে নামাজ আদায় হয়। তৎকালীন সময়ে এলাকায় মুসল্লি সংখ্যা কম হওয়ায় এক কক্ষ বিশিষ্ট মসজিদটি নির্মিত হয়। সঠিকভাবে এর নির্মাণ সন জানা না গেলেও অনেকের ধারণা এর বয়স ৩০০ বছরের অধিক। বর্তমানে মুসল্লি সংখ্যা বেশি হওয়ায় মূল সমজিদের বাইরের অংশে মসজিদটি বৃদ্ধি করা হয়। বাংলা ১৩৬১ সনে মসজিদটির বাইরের বর্ধিত অংশ নির্মিত হয়। ফলে বাইরে থেকে মূল মসজিদটি ভালোভাবে দেখা যায় না।
৩০০ বছরের পুরনো মসজিদটির দৈর্ঘ্য আনুমানিক ২৫ ফুট এবং প্রস্থ্য ১২ ফুট। মসজিদের গম্বুজ এবং মিনারগুলো মুসলিম স্থাপত্যের দৃষ্টিনন্দন কারুকার্যে নির্মিত। বাইরের কার্ণিশগুলোও বাদ যায়নি ক্যালিগ্রাফি থেকে। চুন-সুরকি আর পোড়া মাটি দিয়ে নির্মিত মসজিদটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন হয়ে। মুঘল আমলের নানান নকশা খচিত থাকায় অনেকের ধারণা মুঘল স্থাপত্য কলায় নির্মিত হয় মসজিদটি। বর্তমানে মসজিদটির সামনে একটি ঈদগাঁ মাঠ এবং উত্তর পার্শে নুরানী মাদরাসা রয়েছে। মসজিদটির নির্মাতা আশ্রাফ শিকদার ও তার পরিবার পরিজনের কবর রয়েছে এখানে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশ্রাফ শিকারের পরিবারের অনেকেই এখন আর বেঁচে নেই। তাই মসজিদটির সংস্কারের দায়িত্বও নিচ্ছে না কেউ। সংস্কার কাজের অভাবে মসজিদটি বর্তমানে ধ্বংসের দারপ্রান্তে। মসজিদটি সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। একজন ইমাম, একজন মুয়াজ্জিন এবং একজন খতিব রয়েছেন মসজিদটিতে।
দুর-দুরান্ত থেকে এ মসজিদটি দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা। ভোলার এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটাই আশা ভোলাবাসীর।