পবিত্র কাবাঘরের ঠিক উপরে বিরল মহাজাগতিক ঘটনা

সৌদি আরবের মক্কায় পবিত্র মসজিদুল হারামে কাবাঘরের ঠিক ওপরে অবস্থান করে সূর্য। আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দুপুরে বিরল ও চমকপ্রদ এই মহাজাগতিক ঘটনা ঘটে। এতে বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে কিবলার দিক নির্দেশ করতে সক্ষম হন। খবর গালফ নিউজের।
ঘটনার সময় সূর্য ঠিক কাবার উপর অবস্থান করায় এর আশপাশে ছায়া পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়। জেদ্দা অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মক্কার আকাশে সূর্য সরাসরি কাবার উপরে এসে দাঁড়ায়, যার ফলে আশপাশে কোনো ছায়া ছিল না। এতে পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে যেখানেই সূর্য দেখা যায়, সেখান থেকেই সুনির্দিষ্টভাবে কিবলার দিক নির্ধারণ সম্ভব হয়।’
এ ঘটনাটি ঘটে যখন সূর্য উত্তরায়ণ থেকে দক্ষিণায়ণের পথে থাকে এবং কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে দক্ষিণে গিয়ে মক্কার অক্ষাংশ (২১ দশমিক ৪ ডিগ্রি উত্তর) অতিক্রম করে। এই বিশেষ অবস্থানকে বলা হয়, সোলার জেনিথ বা সূর্য শীর্ষবিন্দু, যা সাধারণত প্রতিবছর মে মাসের শেষদিকে এবং জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময় দুইবার ঘটে। এটি ঘটে পৃথিবী কক্ষপথে ২৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি হেলে থাকার কারণে।
জেদ্দা অ্যাস্ট্রোনমি সোসাইটির সভাপতি মাজেদ আবু জাহরা বলেন, ‘মক্কায় জোহর নামাজের সময় সূর্যের এই বিরল অবস্থান বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে। এক মুহূর্তের জন্য সূর্যের আলো একেবারে খাড়া হয়ে কাবার ওপর পড়ে, যা এক গভীর প্রতীকী তাৎপর্য বহন করে।’
এ ঘটনা শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, বরং এটি আধুনিক প্রযুক্তি ছাড়াই কিবলা নির্ধারণের এক ঐতিহ্যবাহী উপায়। ওই মুহূর্তে যারা সূর্য দেখতে পান, তারা সরাসরি সূর্যের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করলে মক্কা অভিমুখেই থাকবেন, এটি নিশ্চিত।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন সোলার জেনিথ বা সূর্য শীর্ষবিন্দুতে থাকার ঘটনা ঘটে, তখন তারা বায়ুমণ্ডলের প্রভাব ও আলো কীভাবে ভিন্ন কোণে প্রতিফলিত হয়, তা নিরীক্ষণ করতে পারেন। এটি সূর্যের অবস্থান ও আবহাওয়াগত বিশ্লেষণে সহায়ক তথ্য প্রদান করে। এই মহাজাগতিক ঘটনাটি প্রমাণ করে, প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞান কীভাবে একত্রে কাজ করে ধর্মীয় কার্যক্রমে নিখুঁত করতে পারে। আজকের এই সূর্য-কাবার সংযুক্তি যেন ছিল আকাশ থেকে মুসলিম উম্মাহর জন্য এক নিখুঁত দিকনির্দেশনার আলোকরেখা।